“ম্যাডাম এখনও সিসিইউতে আছেন এবং ডাক্তাররা তার সঙ্গে কথা বলছেন”, বলেন ফখরুল।
Published : 27 Oct 2023, 01:06 PM
যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর সিসিইউতে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বলেন, “ম্যাডাম এখনও সিসিইউতে আছেন এবং ডাক্তাররা তার সঙ্গে কথা বলছেন। যে পোস্ট অপারেশন… এখন পর্যন্ত মোটামোটি আছেন।”
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আড়াই ঘণ্টা ধরে টিপসের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার দুই রক্তনালীর মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দেন চিকিৎসকরা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নেতৃত্বে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাতে জানান, ‘টিপস’ করার ফলে খালেদা জিয়ার লিভারে রক্তক্ষরণ এবং পেটে পানি জমার উপশম হবে। তার লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন, এটা তার আগের ধাপ।
বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “ম্যাডামের অবস্থা… আপনারা সবাই জানেন যে, বিদেশ থেকে তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসেছেন। তারা গতকাল সন্ধ্যায় অত্যন্ত সফলভাবে তারা যে কাজের জন্য এসেছিলেন… একটা প্রসিডিউর, সেই প্রসিডিউর তারা করতে পেরেছেন।”
৭৮ বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও হদরোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। এখন লিভার সিরোসিসের জটিলতা আছে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলেছেন, পেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বুকে পানি চলে আসছে। ‘টিপস’ এর পর এই সমস্যা কমে আসতে পারে।
খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে কোনো উন্নত মেডিকেল সেন্টারে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত আছেন। তাকে বিদেশে নেওয়ার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার আবেদন করা হলেও সরকারের সায় মেলেনি। সে কারণে পরে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার সিদ্ধান্ত হয়।
সেই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হামিদ আহমাদ আবদুর রব, ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস এবং হেপাটোলজির অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় পৌঁছান। তাদের আগে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রফিকুল আলম গত বুধবার রাতে ঢাকায় আসেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা তিন চিকিৎসক বৃহস্পতিবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখেন এবং মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখনই জরুরি ভিত্তিতে ‘টিপস’ করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন বসুন্ধরার ওই হাসপাতালে ভর্তি আছেন গত ৯ অগাস্ট থেকে। গত আড়াই মাসে তাকে কয়েক দফা তাকে সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে তার চিকিৎসা চলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।