দুর্গতিনাশিনীর বিদায়ে ভক্তদের ‘সিঁদুর খেলা’

ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার থেকে পাঁচ দিনের যে যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, মঙ্গলবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ আয়োজন।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2023, 10:55 AM
Updated : 24 Oct 2023, 10:55 AM

শঙ্খনাদ-উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকের বাদ্য, আর আরাধনা এবং সধবাদের সিঁদুর খেলার আচারে দেবীদুর্গাকে অশ্রুভেজা ভালোবাসায় বিদায় জানিয়েছেন মর্ত্যের বাসিন্দারা।

ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার থেকে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, মঙ্গলবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ আয়োজন।  

আর বিসর্জনের আগে মণ্ডপে মণ্ডপে সনাতন ধর্মের হিন্দুর নারীরা মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। সে সময় নাচে গানে আনন্দময়ীর বন্দনায় মাতিয়ে তোলেন তারা।

সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ‘পিতৃগৃহ’ থেকে পুত্র-কন্যা নিয়ে দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাসে তার ‘স্বামীর’ ঘরে। এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে। তাই টানা পাঁচদিনের আনন্দ উৎসবের শেষ দিনে দেবীর এই বিদায়বেলায় ভক্তরা আপ্লুত হন বিষাদে।

মহানগর কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দশমীর বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জনে শেষ হয় দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাস চট্টোপাধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পূজার রীতি অনুযায়ী বিজয়া দশমীর দিনে নারীরা সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে আনন্দ করেন এবং মায়ের কাছ থেকে স্বামীর জন্য দীর্ঘায়ু কামনা করেন। সংসারের জন্য মঙ্গল কামনা করে থাকেন।

“এটাকে মায়ের প্রতিবিম্ব বিসর্জনও বলা যায়। সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে দর্পণে বিসর্জন করার নিয়ম রয়েছে। বিসর্জনের পর অঞ্জলি প্রদান করা হয়।”

এছাড়া দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়। এরপর পৌনে ১০টায় পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে অঞ্জলী দেন পূজারী ও ভক্তরা।

এরপর সধবা নারীর সিঁদুর খেলার আচারে মুখরিত হয়ে ওঠে মণ্ডপ। স্বামীরা তাদের স্ত্রীর কপালে সিঁদুর মেখে দেন। নারীরা স্বামী এবং সংসারের কল্যাণের জন্য দুর্গা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। বেলা ১২টার দিকে ঢাকের বাদ্যে শুরু হয় নাচ।

ধানমণ্ডি থেকে স্ত্রীকে নিয়ে মণ্ডপে এসেছেন কৃষ্ণেন্দু সাহা। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেবী দুর্গা তো এদিন যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন। এজন্য আজ শুভ বিজয়া। দিনটিতে ভক্তরা আনন্দ করেন। আবার এদিন মা আমাদের ছেড়ে কৈলাশে ফিরে যান, ফলে দিনটি আমাদের জন্য বেদনারও।”

আজিমপুর মণ্ডপে এসেছিলেন যষরাজ ও তার স্ত্রী। যষরাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মা আমাদের প্রতি সদয় হয়েছেন বলেই আমরা ভালোমতো পূজা শেষ করেছি। মা যেন আমাদের সকলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনেন এই প্রার্থনা করেছি। আসছে বছরের জন্য আমরা আবার অপেক্ষায় থাকবো।”

দেশজুড়ে এবার ৩২ হাজার ৪০৭টি মন্দির-মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। পঞ্জিকামতে, দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যে এসেছেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। ঘোড়ায় চড়েই কৈলাশে ফিরে যাচ্ছেন তিনি।

সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ‘পিতৃগৃহ’ থেকে পুত্র-কন্যা নিয়ে দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাসে তার ‘স্বামীর’ ঘরে। এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে।

দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন মণ্ডপে শুরু হয়ে যায় প্রতিমা বিসর্জনের পর্ব। এদিকে বিকেলে ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ থেকে একটি শোভাযাত্রাও বের হয়। এর আগে সকাল ১০টা থেকে রক্তদান কর্মসূচিও পালন করা হয়।

Also Read: দশমীতে সিঁদুর খেলা