রাজধানীর তুরাগে এক পুলিশ সদস্যের বাসা থেকে তার সৎ মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তুরাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার জানান, রোববার বিকালে তুরাগের 'ডি' ব্লকের ৪ নম্বর সড়কে পুলিশের কনস্টেবল রবিউল আলমের (৩২) বাসা থেকে তার সৎ মেয়ে মুশফিকা নাজনিন মুভির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মুশফিকা তুরাগ এলাকার স্থানীয় একটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তার নিজের বাবা মোবিন মোল্লা ছিলেন সৌদি প্রবাসী, বাড়ি যশোরে। প্রায় এক যুগ আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
বছর তিনেক আগে কনস্টেবল রবিউল আলমকে বিয়ে করেন মুশফিকার মা শ্যামলী আক্তার; এই সংসারে শ্যামলী আক্তারের এক বছরের একটি ছেলে আছে। দুই ছেলে মেয়েকে নিয়েই শ্যামলী তার দ্বিতীয় স্বামী সংসারে থাকেন।
কনস্টেবল রবিউল আলমের দাবি, মুশফিকা ‘আত্মহত্যা’ করেছে। অন্যদিকে মুশফিকার চাচা রুহুল আমিন এই মৃত্যুর পেছনে রবিউলের ‘হাত’ আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ওসি মওদুত হালদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছোট ভাইয়ের সাথে মোবাইলের সিম খোলা নিয়ে ঝগড়া হয় মুশফিকার। এ থেকেই সে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে তার সৎ বাবা দাবি করেছেন।“
তুরাগ থানার এসআই উপমা কুণ্ডু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, খবর পেয়ে তিনি ওই বাসায় গিয়ে দোতালার একটি কক্ষ থেকে মুশফিকার ঝুলন্ত মরদেহ নিচে নামান।
"মুশফিকার ছোট ভাই জানালা দিয়ে বোনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার করলে বাসার সবাই আসে, এরপরে তারা পুলিশকে খবর দেয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।"
মুশফিকার মৃত্যুর খবর পেয়ে চাচা রুহুল আমিন, চাচাত ভাই মনিরসহ কয়েকজন আত্মীয় যশোর থেকে ঢাকায় আসেন।
রুহুল আমিন বলেন, “ও আত্মহত্যা করার মত মেয়ে নয়, খুবই শান্তশিষ্ট। যদি আত্মহত্যাই করে থাকে, তাহলে এর পেছনে বড় ধরনের কোনো কারণ রয়েছে। মুশফিকা বেশ সুন্দরী হওয়ায় এক্ষেত্রে তার সৎ বাবাকে সন্দেহের বাইরে রাখছি না। এ ঘটনার পেছনে সৎ বাবার কোনো ভূমিকা আছে কিনা সেটা তদন্ত করে দেখা জরুরি।"
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বাবার নামের জায়গায় সৎ বাবা রবিউলের নাম থাকায় ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করে রুহুল আমিন বলেন,” মুশফিকার মৃত্যুর পেছনে সৎ বাবার কোনো হাত থাকতে পারে।“
এ বিষয়ে এসআই উপমা কুণ্ডু বলেন, “মুশফিকার স্কুল কলেজে বাবার নাম রবিউল আছে, মোবিন মোল্লা নেই। তা ছাড়া পরিবারের সদস্যরা যা বলেছে, তাই লেখা হয়েছে।“
ওসি হালদারও জানিয়েছেন, রবিউল আলম যে মেয়েটির সৎ বাবা, সেটা তারা পরে জানতে পেরেছেন।
আর এসআই উপমা কুণ্ডু বলছেন, মেয়েটি আত্মহত্যাই করেছে কি না, তা ময়না তদন্তের পর জানা যাবে।
এদিকে স্কুল-কলেজসহ সব জায়গায় মুশফিকার বাবার নাম পরিবর্তনের পেছনে কোনো ‘রহস্য’ আছে মন্তব্য করে চাচা রহুল আমিন বলেন, তারা চাইছিলেন যশোরে বাবার কবরের পাশে মেয়ের দাফন হোক। কিন্তু মুশফিকার মা তাতে রাজি নন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মুশফিকার মা শ্যামলী আক্তার এবং মামা রিপনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি।
ওসি হাওলাদার জানিয়েছেন, মুশফিকার মৃত্যু বা বাবার পরিচয় নিয়ে তার চাচা থানায় এসে অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্ত করবে।