“স্যালাইনের প্যাকেটের গায়ে যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা থাকবে, তার চেয়ে এক টাকাও বেশি নেওয়া যাবে না।”
Published : 29 Jan 2024, 04:38 PM
ডেঙ্গুর ভরা মৌসুমে ইনজেক্টেবল স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যারা বাড়তি দাম আদায় করছে, তাদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থেকে অভিযান শুরু করবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, সারা দেশে এই অভিযানে যদি কোনো ফার্মেসিতে স্যালাইন মজুদ করে রাখতে দেখা যায়, তাহলে সেই দোকান বন্ধ করে ড্রাগ লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
স্যালাইনের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সভা কক্ষে উৎপাদনকারী কোম্পানি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা এবং অংশীজনদের নিয়ে এক সভায় মহাপরিচালকের এই হুঁশিয়ারি আসে।
স্যালাইনের প্যাকেটের গায়ে যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা থাকবে, তার চেয়ে এক টাকাও বেশি নেওয়া যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আজ স্যালাইন বিষয়ক সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বসেছি। আপনাদের কথা শুনব, তবে কৃত্রিম সংকটের কথা বলে বাড়তি দাম নেওয়া যাবে না।"
সফিকুজ্জামান বলেন, স্যালাইনের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হতে পারে ৮৭ টাকা। কিন্তু দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর কোনো কোনো দোকানে ৩৫০ টাকায়ও স্যালাইন বিক্রি করছেন দোকানিরা।
ফার্মেসি মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "কোম্পানি স্যালাইনের দাম বাড়ায় নাই এবং প্রোডাকশনও ঠিক আছে। এটা আপনারাও স্বীকার করেছেন। তার মানে আপনারা দোকান মালিকরা দাম বাড়িয়েছেন।"
ডেঙ্গু আক্রান্তদের প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। যাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে রক্তনালীতে ইনজেক্টেবল স্যালাইন দেওয়া হয়।
কিন্তু ডেঙ্গুর ভরা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইভি স্যালাইন সঙ্কটের খবর আসছে। অনেক ফার্মেসিতে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না, পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
এ বছর দেশে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে দেড় লাখ ছাড়িয়েছে, তাদের মধ্যে ৭৬৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মশাবাহিত এ রোগ। আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই সংখ্যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
দেশে বর্তমানে স্যালাইনের যে উৎপাদন, তাতে সঙ্কট হওয়ার যে কোনো কারণ নেই, তা সভায় হিসেব করে দেখিয়ে দেন ইঞ্জেক্টেবল স্যালাইন প্রস্তুতকারী কোম্পানি পপুলার ফার্মসিউটিক্যালসের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল হাই সিদ্দিক।
তিনি বলেন, দেশে প্রতিমাসে ৪৪ লাখ ব্যাগ স্যালাইন লাগে এবং ছয়টি কোম্পানি মিলে তা প্রস্তুত করে আসছে এতদিন ধরে। ডেঙ্গুর সময় চাহিদা বাড়ায় ইতোমধ্যে উৎপাদন বাড়িয়ে ৫৩ লাখ ব্যাগ করা হয়েছে। পপুলার আগে ১৪ লাখ ব্যাগ উৎপাদন করত, এখন করছে ১৮ লাখ।
"আমি যতটুকু জানি, বাংলাদেশে দৈনিক ডেঙ্গু রোগী আসে ৫০ হাজার। সেক্ষেত্রে দৈনিক যদি একজনকে ৪ ব্যাগ স্যালাইনও দিতে হয়, তাহলে মাসে অতিরিক্ত ২ লাখ ব্যাগ স্যালাইন লাগে। ২ লাখ অতিরিক্ত লাগলে প্রডাকশন লাগে ৪৬ লাখ। কিন্তু আমরা ৯ লাখ বেশি উৎপাদন করছি।"
বাজারে সংকটের জন্য ফার্মেসি মালিকদের দায়ী করে আব্দুল হাই সিদ্দিক বলেন, "৯ লাখ ব্যাগ অতিরিক্ত ব্যাগ বানানোর পরও কেন ক্রাইসিস থাকবে? আমরা প্রডাকশন করে তো ঘরে রেখে দেব না। আমরা স্যালাইন সাপ্লাই করছি। তাই বলছি- আমাদের প্রডাকশন আছে, সাপ্লাই আছে; আপনারা (সরকার) শুধু ম্যানেজমেন্ট এবং সাপ্লাই চেইনটা দেখেন।"
বাংলাদেশ কেমিস্ট সমিতির পরিচালক আনোয়ার হোসেন মির্জা বলেন, "কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত স্যালাইন উৎপাদন করছে। তাদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। সেখান থেকে বোঝা যায় যে সাপ্লাই চেইনে গলদ আছে। হয়ত কেউ স্টক করছে, কেউ রেখে রেখে বেশি দামে বিক্রি করছে।"
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান বলেন, "আমাদের ছয়জন স্যালাইন প্রডিউসার। বড় কোম্পানিগুলো বলছে, ২৫ শতাংশ প্রডাকশক বাড়িয়েছে তারা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে ৮৭ টাকার প্রডাক্ট ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করব, এটা কোনোভাবেই আশা করা যায় না। এক্ষেত্রে একটা সমাধান হতে পারে যে স্যালাইনের দাম বাড়ানোর জন্য নাকি তারা আবেদন করেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যদি জানে যে ছয় মাসের মাঝে দাম বাড়বে না, তাহলে কিন্তু তারা স্যালাইন আর স্টক করবে না।"
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)