আইনজীবী জানিয়েছেন, আসামি মির্জা আব্বাস তার সাফাই সাক্ষ্যে মামলার বিষয়ে কথা বলবেন আগামী ১৫ নভেম্বর।
Published : 12 Nov 2023, 08:50 PM
সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় নিজের পক্ষে নিজেই আংশিক সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের দুই কমকর্তাও।
ঢাকার সাবেক মেয়র আব্বাস রোববার ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ মঞ্জুরুল ইমামের আদালতে মামলার ঘটনায় প্রবেশের আগে নিজের পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরেন।
মামলার বিষয়ে তিনি পরের নির্ধারিত দিন ১৫ নভেম্বরে বলবেন বলে জানান তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও মহি উদ্দিন চৌধুরী।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আব্বাস তার সাফাই সাক্ষ্যতে বলেছেন, কৃষি পেশাজীবী থেকে তার আগের প্রজন্ম ব্যবসায়ী পরিবার হয়ে ওঠে। মতিঝিলের পীরজঙ্গী মাজার থেকে রাজারবাগের কাছের ফ্লাইওভার পর্যন্ত তার এবং পরিবারের, বংশের জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর জায়গা।
‘ধনাঢ্য পরিবার থেকে’ আসার কথা মির্জা আব্বাস তুলে ধরেছেন উল্লেখ করে আইনজীবী জাহাঙ্গীর জানান, ঢাকার সাবেক মেয়র আব্বাস দাবি করেছেন, তাকে বাঁকা পথে তার সম্পদ অর্জন করতে হয়নি। তার চাচা শহীদের নামে শহীদবাগের নামকরণ করা হয়। ঢাকার বিখ্যাত মাজেদ সরদার তার এবং তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তার চাচা সেসময় ইউনিয়ন পরিষদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
মির্জা আব্বাস বলেছেন, চাচার হাত ধরেই তার রাজনীতিতে প্রবেশ। তার নানার কাছ থেকে তার বাবা এবং তিনি ঢাকার খিলগাঁও রেলগেট থেকে রাজারবাগ পর্যন্ত পুরো এলাকার জমির মালিকানা পান। শাজাহানপুর থেকে রাজারবাগ মোড় পর্যন্ত যে রাস্তা, সেই রাস্তাটি তাদের মালিকানার জায়াগা বিভক্ত করে গড়ে ওঠে।
মির্জা আব্বাস বলেন- তিনি জিয়াউর রহমানের আমলে গড়া ‘জাগো দল’ এ সদস্যপদ নেন। পরে বিএনপিতে যোগ দেন। চাচা শহীদ তাকে কমিশনার নির্বাচন করান। ১৯৭৭ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের কমিশনার নির্বাচিত হন। অনেক পরে তিনি সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
আব্বাসের পক্ষে সাক্ষ্য দেন ঢাকা ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা শাহজাহান মিয়া ও কাজী শিফাউর রহমান হিমেল। তারা আদালতে বলেন, মির্জা আব্বাস ঢাকা ব্যাংকের শেয়ার নিয়মতান্ত্রিকভাবে পান। বোনাস এবং ডিভিডেন্ড শেয়ার হিসাবে ঢাকা ব্যাংকের অংশীদার হন। ২০০৭ সালে দুদক এসব নথি জব্দ করে নিয়ে যায়।
আব্বাসের আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ এই দুই সাফাই সাক্ষীকে দুই লাইন করে জেরা করেন।”
গত ৩১ অক্টোবর মামলাটি সাফাই সাক্ষ্যের জন্য ছিল। কিন্তু ওইদিন মির্জা আব্বাস আদালতে হাজির হননি। কোনো সাফাই সাক্ষীও আদালতে যাননি। আদালত সেদিন জামিন বাতিল করে আব্বাসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
শাহজাহানপুর থানার একটি নাশকতার মামলায় মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়ার পর দুদকের এ মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সাফাই সাক্ষ্যের জন্য গত ৮ নভেম্বর মির্জা আব্বাসকে আদালতে হাজির করা হয়।
সেদিন তার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন আইনজীবী এ কে এম শাহজাহান এবং এনআরবি ব্যাংকের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট নুরুল হোসেন খান।
সম্পদের তথ্য গোপন: মির্জা আব্বাসের পক্ষে দুই জনের সাক্ষ্য
আয়ের সঙ্গে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদের মালিক হওয়া এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ অগাস্ট দুদকের উপপরিচালক মো. শফিউল আলম রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৪ মে দুদকের উপপরিচালক মো. খায়রুল হুদা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সেখানে আব্বাসের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ২২ লাখ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
২০০৮ সালের ১৬ জুন মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক। বিচার চলাকালে দুদকের পক্ষে মোট ২৪ জন সাক্ষ্য দেন।