গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি ঠেকাতে ঢাবির নীতিমালা, সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুতি

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নীতিমালাটি উপস্থাপনর পর শিক্ষকদের মত দিতে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2023, 07:31 PM
Updated : 23 Jan 2023, 07:31 PM

বেশ কয়েকটি ঘটনা প্রকাশের প্রেক্ষাপটে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি প্রতিরোধে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তাতে নকল বা সামঞ্জস্যের মাত্রা অনুযায়ী সংশোধনের সুযোগ দেওয়া সাপেক্ষে জরিমানা, ডিগ্রি বাতিল ও পদাবনতি, এমনকি চাকরিচ্যুতিসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

‘দ্য রুলস ফর দ্য প্রিভেনশন অব প্লেইজারিজম’ শীর্ষক এই নীতিমালা সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উপস্থাপন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ( শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সভায় নীতিগতভাবে নীতিমালাটি গৃহীত হয়েছে। সংশোধনের জন্য কেউ যদি আরও কোনো পরামর্শ দিতে চায়, সেজন্য দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।

“যেহেতু এই নীতিমালাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, আমরা শিক্ষকদের বলেছি আপনারা আরও দুই সপ্তাহ বিষয়টি ভালোভাবে দেখেন, কারও যদি গ্রহণযোগ্য মতামত থাকে, তাহলে সেটা আমরা বিবেচনা করব। দুই সপ্তাহ পর ডিনস কমিটির মিটিংয়ে উত্থাপন করে পরবর্তী সিন্ডিকেটের সভায় অনুমোদন নিয়ে আমরা এটা বাস্তবায়নে যাব।”

নীতিমালা অনুযায়ী, উদ্ধৃতি বা সূত্র ছাড়া কোনো গবেষণা বা লেখার সঙ্গে অন্য কারও তথ্য-উপাত্ত, ধারণা, লেখা বা কাজের সামঞ্জস্য চৌর্যবৃত্তি হিসেবে গণ্য হবে।

এতে গবেষণায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত সামঞ্জস্যকে ‘গ্রহণযোগ্য’ (লেভেল-০) বলা হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে একক উৎস থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশের বেশি তথ্য ব্যবহার করা যাবে না।

একই উৎস বা সূত্র থেকে ২ শতাংশের বেশি তথ্য ব্যবহার করা হলে তা নিম্নমাত্রার সামঞ্জস্যের (লেভেল-১) আওতায় পড়বে। অন্যের লেখার সঙ্গে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মিলও এই লেভেলে রাখা হয়েছে।

৪০-৬০ শতাংশ হবে মধ্যমাত্রা (লেভেল-২), আর ৬০ শতাংশের বেশি সামঞ্জস্য উচ্চমাত্রার (লেভেল-৩) অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে । উচ্চমাত্রার অপরাধের পুনরাবৃত্তি হবে সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ।

নীতিমালা অনুযায়ী, লেভেল-১ এর অপরাধ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি বা ক্রেডিট ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে লেখক বা গবেষককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া সাপেক্ষে পাণ্ডুলিপি সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। ওই সময়েও সংশোধনে ব্যর্থ হলে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া সাপেক্ষে তাদের আরও ৬ মাস সময় দেওয়া হতে পারে।

দ্বিতীয় পর্যায়েও সংশোধনে ব্যর্থ হলে লেখক বা গবেষকের ওই ডিগ্রি বা কোর্স বাতিল বা প্রত্যাহার করা হবে। এই অপরাধে দায়ী ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা গবেষক হলে এবং তিনি নকল ডিগ্রির মাধ্যমে নিয়োগ-পদোন্নতি বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট সময়ে পাওয়া সব টাকা অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে ফেরত নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা সাপেক্ষে ৬ মাসের মধ্যে পাণ্ডুলিপি সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে।

এই সময়ের মধ্যে ডিগ্রি চৌর্যবৃত্তিমুক্ত প্রমাণ করতে পারলে তা নবায়ন হবে। তবে ওই ব্যক্তি অন্য কোনো সুবিধা পাবেন না। কিন্তু ওই ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে পাণ্ডুলিপি সংশোধনে ব্যর্থ হলে পদাবনতি ও দুই বছরের জন্য পদোন্নতি বন্ধের শাস্তি পাবেন।

লেভেল-২ এর অপরাধ প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তি ২০ হাজার টাকা জরিমানা সাপেক্ষে পাণ্ডুলিপি সংশোধনে ১ বছর সময় পাবেন। এই সময়ে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি বা ক্রেডিট স্থগিত থাকবে। ওই সময়ে পাণ্ডুলিপি সংশোধনে ব্যর্থ হলে আরও ২০ হাজার টাকা জরিমানা সাপেক্ষে আরও ৬ মাস সময় দেওয়া হবে। পুরো সময় পর ওই ডিগ্রি বা কোর্সটি বাতিল করা হবে।

অপরাধী ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা বা গবেষক হলে এবং তিনি নকল ডিগ্রির মাধ্যমে নিয়োগ-পদোন্নতি বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট সময়ে পাওয়া সব টাকা অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে ফেরত নেওয়া হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি বাতিলের পাশাপাশি এক ধাপ পদাবনতি ও চার বছরের জন্য পদোন্নতি বন্ধের শাস্তি হবে তার।

লেভেল-৩-এর অপরাধ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি বা কোর্স ২ বছরের জন্য স্থগিত করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা সাপেক্ষে পাণ্ডুলিপি সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ে সংশোধনে ব্যর্থ হলে ওই ডিগ্রি বাতিল ও কোর্সটি অনুত্তীর্ণ (এফ গ্রেড) বলে গণ্য হবে।

অপরাধী ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা বা গবেষক হলে এবং তিনি নকল ডিগ্রির মাধ্যমে নিয়োগ-পদোন্নতি বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট সময়ে পাওয়া সব টাকা অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে ফেরত নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি বাতিলের পাশাপাশি এক ধাপ পদাবনতি ও ছয় বছরের জন্য পদোন্নতি বন্ধের শাস্তি হবে তার। কোনো ব্যক্তি লেভেল-৩-এর অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত করা হবে।

চৌর্যবৃত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি বা কোর্সের তত্ত্বাবধায়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জার্নালের ক্ষেত্রে সম্পাদনা পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তির বিধান আছে নতুন এই নীতিমালায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান বা ইনস্টিটিউটের পরিচালক বরাবর যে কোনো ব্যক্তি লিখিতভাবে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির বিষয়ে অভিযোগ করতে পারবেন।

উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি ও তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। চৌর্যবৃত্তি রোধে গবেষণায় উদ্ধৃতির ব্যবহার, চৌর্যবৃত্তি শনাক্তের সফটওয়্যার ও টুলসের ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা বা উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে নীতিমালায়।