জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পুরনো মামলায় হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পুরনো বলে কিছু না। পুরনো মামলা তো যুগ যুগ ধরে রাখব না। নতুন করে কিছু হচ্ছে না।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2022, 11:47 AM
Updated : 3 Nov 2022, 11:47 AM

দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ‘ভাঙচুর ও জনদুর্ভোগ’ তৈরি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘বসে থাকবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো একটু সক্রিয় হয়ে যায়, কিংবা নানান ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে; যাতে একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয় কিংবা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

“আমরা দেখেছি নির্বাচনের সময়ে যার যার দলের কথা, ব্যক্তিগত প্রচারণা নিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু হয়ে থাকে।”

এটা ‘অস্বাভাবিক কিছু নয়’ মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোনো দল তার কর্মকাণ্ড তারা করবেন। তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তারা যদি জনদুর্ভোগ তৈরি করেন, রাস্তা-ঘাট আটকে দিলেন…।”

সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপে’ বক্তব্য দিচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আজকে আমি দেখলাম একজন সংসদ সদস্য বলছেন- তার তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে কোনো এক জায়গায় যেতে। তিন ঘণ্টা লাগে কেন, হয় রাস্তার মধ্যে কোনো মিটিং হয় তখন, কিংবা খোড়াখুড়িসহ কিছু ডেভেলপমেন্টের কাজ হয়।

“এই ধরনের যদি কেউ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, কিংবা গাড়িঘোড়া ভাঙচুর করে কিংবা জনগণের দুর্ভোগ তৈরি করার জন্য তারা যদি কিছু করে, তাহলে তো আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না।”

বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে সরকারের ‘বাধা দেওয়ার ইচ্ছা নেই’ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা পৃথিবীর সব দেশেই হয়ে থাকে, আমাদের বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, যে যার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করে, তারা মিটিং করবে তাদের দাবি-দাওয়ার কথা বলবে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সেগুলো করবে, আমাদের সরকারের কোনো রকম বাধা দেওয়ার ইচ্ছা নেই এবং আমরা বাধা দিচ্ছিও না।

“আপনারা দেখেছেন, কোনো এক দলের নেতা বলতেছেন- আপনারা আসবেন, লাঠিটা নিয়ে আসবেন। লাঠিটা নিয়ে আসার সময় দেশের ফ্ল্যাগটা বেঁধে নেবেন, তাহলে কেউ কিছু বলতে পারবে না।

“ইনটেনশনটা কী সেখানে আপনাদের? দেখলাম পুলিশের ওপর লাঠিপেটা শুরু করেছে। আপনারা এই দৃশ্য দেখেছেন পুলিশের ওপর পেটানোর দৃশ্য। এই সমস্ত কিছু হলে তখন তো নিরাপত্তা বাহিনী তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।”

সরকার বদল নির্বাচনের মাধ্যমে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগ সব সময়েই মনে করে যে নির্বাচনের মাধ্যমে পাবলিক ম্যান্ডেটে সরকার বদল হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা অনেক কিছুই দেখেছি, ষড়যন্ত্র দেখেছি। এগুলোর মাধ্যমেও ক্ষমতা বদল হয়ে গিয়েছিল।

“আওয়ামী লীগ এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই মনে করেন, সরকার বদল করবার একমাত্র উপায় হলো নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে। সেজন্য সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে, সেই নির্বাচনকেই আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে।”

বিরোধীদলগুলোকে জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, “আমরা সব সময় বলে আসছি, সব সময় বিশ্বাস করি- জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে আসতে হবে; এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যদি কিছু ঘটায়, চেষ্টা করে কিংবা করে তাহলে নিরাপত্তা বাহিনী সেটার ব্যবস্থা নেবে।”

ভাঙচুর হলে মামলা হবেই

ভাঙচুর করলে মামলা ‘হবেই’ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কালকে একজন বিচারপতির গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। বিচারপতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মামলা করেছেন। এই মামলা তো হবেই।

“এখানে রাজনীতির গন্ধ আনা উচিত নয়। বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তারা ভাঙচুর করেন, তারা যদি জনদুর্ভোগ তৈরি করেন, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।”

ভোটের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুরনো রাজনৈতিক মামলা সক্রিয় করার অভিযোগ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, “পুরনো মামলা রয়ে গেছে। এগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। পুরনো বলে কিছু না। পুরনো মামলা তো যুগ যুগ ধরে রাখব না। নতুন করে কিছু হচ্ছে না।”

অন্যদের মধ্যে বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক সভায় বক্তব্য দেন।