“বেসরকারি পাঠাগারের জন্য সরকারি অনুদান বাড়ানো খুবই জরুরি,” বলেন মফিদুল হক।
Published : 05 Jun 2023, 09:37 PM
প্রতিবছর যেসব বেসরকারি পাঠাগারকে অনুদান দেওয়া হয়, তার একটি অংশ ‘সক্রিয় প্রতিষ্ঠান নয়’ বলে স্বীকার করেছেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর।
তিনি বলেছেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখেছিলাম- অনেক জায়গায় ভুয়া পাঠাগার আছে, তারা সক্রিয় নয়। কিন্তু অনুদান নিচ্ছে। এসব পাঠাগার বন্ধ করা হয়েছে। পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। তবে এখন অনেকটাই কমিয়ে আনতে পেরেছি।
“যেসব পাঠাগার সক্রিয় নয়, কিন্তু অনুদান পাচ্ছে- তাদের অনুদান দেওয়া বন্ধ করতে পারলে যারা সক্রিয় রয়েছে, তাদের অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া যাবে।”
সোমবার জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পরিচালনা বোর্ডের সভাকক্ষে ‘গবেষণা কার্যক্রমের প্রতিবেদন প্রকাশ ও সুপারিশসমূহ উপস্থাপনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রতিবছর আটশর মত বেসরকারি গ্রন্থাগারকে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার অনুদান দিয়ে থাকে। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে অনুদান পেয়েছে ৭৫১টি প্রতিষ্ঠান।
মিনার মনসুর জানান, তিনটি গ্রেডে একেকটি পাঠাগারকে প্রতিবছর ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়। এর মধ্যে অর্ধেক টাকা চেকের মাধ্যমে দেওয়া হয়, বাকি টাকার বই দেওয়া হয়।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক বলেন, “পাঠাগারগুলোকে সাংস্কৃতিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গ্রন্থকেন্দ্র থেকে আমরা এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠাব। এই বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করব।”
অনুষ্ঠানে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মফিদুল হক বলেন, “গবেষণা প্রতিবেদনে যারা সুপারিশ করেছে, তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ফলে এই সুপারিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ভুয়া পাঠাগার অনেকটা কমেছে, সেটা যেন জিরো টলারেন্সে চলে যায়।
“এই অনুদানের টাকা তো খুব বেশি না, কিন্তু সমাজ কতটা দুর্বত্তায়নে ঝুঁকে পড়েছে যে- এই টাকাটাও মেরে খাওয়ার জন্য কেউ কেউ চেষ্টা করে! এসব ভুয়া পাঠাগারকে অনুদান দেওয়া একেবারেই বন্ধ করে, এটাকে জিরো টলারেন্সে কিভাবে আনা যায়, সেটা গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।”
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল বলেন, “বেসরকারি পাঠাগারের জন্য সরকারি অনুদান বাড়ানো খুবই জরুরি৷ প্রতি বছর যে টাকা অনুদান দেওয়া হয়, সেটি মোটেও যথেষ্ট নয়।
“গবেষণা প্রতিবেদনে অন্তত ২৫ শতাংশ সরকারি অনুদান বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। আমি করি সেটি ৫০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি বাড়ানো উচিত।”
প্রতি বছর সক্রিয় পাঠাগারকে ২৫ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া দরকার বলে মনে করেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর।
তিনি বলেন, “গ্রন্থকেন্দ্রের বাজেট খুব বেশি নয়। অনুদানের জন্য যদি ২৫ কোটি টাকা বছরে দেওয়া যায়, সেখান থেকে সাড়ে ১২ কোটি টাকা অনুদান এবং সাড়ে ১২ কোটি টাকার বই দিতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”
সুপারিশ
সভায় গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তাক গাউসুল হক।
গবেষণা কার্যক্রমের জন্য মাঠ পর্যায়ে দেশের চার বিভাগের ৩৬ জেলাকে ৯টি জোনে বিভক্ত করা হয়৷ প্রতিটি জেলায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪টি করে অনুদানপ্রাপ্ত বেসরকারি গ্রন্থাগার নির্বাচন করে মোট ১৪৪টি গ্রন্থাগারের পাঠক, গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের মৌখিক সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে গবেষণার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৯ শিক্ষার্থীকে ৯টি জোনে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৪৪টি গ্রন্থাগারের ৭১৭ জন ব্যবহারকারী এবং ১৩৬ জন গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে গবেষণা কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এর মধ্যে দুই বছরের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৬টি এবং মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ১৩টি সুপারিশ করা হয়।
পাঠাগারগুলোতে কম্পিউটার, প্রজেক্টর ও পর্দা দেওয়ার সুপারিশ এসেছে, যাতে ভিডিও প্রদর্শনী, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় সেসব ব্যবহার করা যায়।
গ্রন্থাগারে অভিন্ন, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে শ্রেণিকরণ ও সূচিকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। পাঠক বাড়াতে গ্রন্থাগারকেন্দ্রিক কর্মসূচি বাড়ানোর জন্য বার্ষিক পাঠ কার্যক্রম প্রণয়ন করা এবং এর আওতায় নিয়মিত পাঠচক্র আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বেসরকারি পাঠাগারের কার্যক্রমে গতি আনতে সরকারি অনুদানের হার ২৫ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিয়মিত পাঠাগারে আসে, তার জন্য উদ্বুদ্ধকরণের কর্মসূচি নেওয়ার কথা বলা হয়।
আর জরুরি সুপারিশে বলা হয়, অনুদানপ্রাপ্ত পাঠাগারের কার্যক্রম নিয়মিত তদারক করতে হবে। তার জন্য এসব গ্রন্থাগারকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। পাঠাগারগুলো যাতে কার্যক্রমের প্রতিবেদন পেশ করে তাও নিশ্চিত করতে সুপারিশে বলা হয়েছে।