দেশের পদ্মা অববাহিকায় পাঁচ দিনের মধ্যে বন্যার আশঙ্কা নেই বলে বার্তা দিয়েছে বন্যা পুর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
Published : 27 Aug 2024, 11:19 PM
ফারাক্কা ব্যারেজের গেইট খোলা থাকায় এবং বৃষ্টিপাতে পদ্মা অববাহিকায় পানি বাড়লেও পরিমাণ খুব কম হওয়ায় এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে বার্তা দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো।
দেশের পদ্মাতীরবর্তী এলাকায় আপাতত বন্যা হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই বলে তথ্য দিচ্ছেন পাউবোর কর্মকর্তারা।
বর্তমান অবস্থা নিয়ে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হানের সঙ্গে কথা হলে তিনি এমন আভাসই দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে উদয় রায়হান বলেন, “বাংলাদেশে পদ্মার উজানে ভারতের গঙ্গা অববাহিকায় বৃষ্টি হলেও তা স্বাভাবিক মাত্রায় হচ্ছে। এতে পানি বাড়লেও তা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না। ফলে পদ্মাতীরবর্তী এলাকায় এ সময়ে বন্যা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।”
ভারতের ত্রিপুরা, বাংলাদেশের কুমিল্লা ও ফেনীতেও আপাতত বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কোনো শঙ্কা দেখছেন না পাউবোর এই কর্মকর্তা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজের (বাঁধ) কাছে বাংলাদেশ অংশে পদ্মার পানি বিপৎসীমার দেড় মিটার নিচে ছিল।
এই তথ্য দিয়ে কেন্দ্রটি বলছে, প্রতিদিন কয়েক সেন্টিমিটার করে বাড়ছে পানি। ফলে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা নেই।
মঙ্গলবার পর্যন্ত কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ১১৬টি পয়েন্টের মধ্যে পানি বাড়ছে ২৪টিতে, কমছে ৮৮টিতে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুশিয়ারা, গোমতী ও মাতামুহুরী নদীর পানি। তবে সেখানেও পানি কমছে।
পাউবোর উত্তরাঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, “বর্ষার সময়ই ফারাক্কার গেট খোলা থাকে। আমাদের এখানে যে প্রভাবটা, সেটা হল নরমাল। যে বন্যাটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটাই কন্টিনিউ করবে। ফারাক্কার গেট খোলাই থাকে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
মঙ্গলবার বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সঙ্গে কথা বলার সময় এনায়েত উল্লাহ কয়েক দিনে পদ্মায় কী পরিমাণ পানি বাড়ছে, তার তথ্য দেন।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ দিনের মধ্যে ২৩ অগাস্ট রাজশাহীর রামপুরার বোয়ালিয়া গেজ স্টেশনে পদ্মার পানির স্তর ছিল ১৬ দশমিক ২ সেন্টিমিটার। এর পরের দিন ১৬ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার হলেও ২৫ অগাস্ট সেটি স্থিতিশীল ছিল। গতকাল (সোমবার) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটারে।
“আজকে (মঙ্গলবার) সকাল ৬টায় আমরা পেয়েছি ১৬ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ এটা গ্রাজুয়ালি বাড়ছে, তবে রেটটা (হার) খুবই কম। আমাদের যে ফোরকাস্ট দেওয়া আছে, এটা ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটারে যেতে পারে। অর্থাৎ ৮ সেন্টিমিটার বাড়তে পারে আগামী ৫ দিনে।”
আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে পাউবো কর্মকর্তা এনায়েত উল্লাহ বলেন, “আমাদের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আমরা যেটা বুঝতে পারছি বিগত দিনের যেসব তথ্য-উপাত্ত আছে, এগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা এটুকু বুঝতে পেরেছি যে, এখানে অস্বাভাবিক কোনো বন্যা হবে না।”
এই পর্যালোচনার আলোকে তিনি বলছেন, “ফলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
ফারাক্কা ব্যারেজের গেইট খোলা থাকার বিষয়টি পরিষ্কার করতে গিয়ে এনায়েত উল্লাহ বলেন, “যদি গেইট বন্ধ রাখা হয়, তারপর একটা জিনিস খোলা হয়, তাহলে তো এখানে পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কথা; এখানে তো সেটা হচ্ছে না।
“অর্থাৎ আমরা এটা বলতে চাচ্ছি যে, বর্ষার সময় গেইট খোলাই থাকে; এটাই সত্য। এটা হলো ব্যারেজ। ডাইভারশন চ্যানেলের মাধ্যমে যে পানিটা সর্বোচ্চ নিতে পারে, সেটা হলো ৪০ হাজার কিউসেক। এর বেশি পানি উনারা (ভারত) নিতে পারবেন না। কাজেই ফারাক্কা পয়েন্টে যে পানিই আসুক, সর্বোচ্চ ৪০ হাজার নিয়ে বাকিটা তারা ছেড়ে দেবেই দেবে। এটাই সব সময় করা হয়ে থাকে।”
সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গঙ্গা নদীর পানির সমতল উজানে ফারাক্কা পয়েন্টে এবং দেশের অভ্যন্তরে পাংখা পয়েন্টে অপরিবর্তীত রয়েছে। গঙ্গা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি জারি করে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার আগ পর্যন্ত দেশের বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে। তবে কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বন্যা উপদ্রুত ও বন্যাপ্রবণ এসব অঞ্চলে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে ১২টি স্টেশন।
মুহুরী নদীর পরশুরাম, কুশিয়ারার অমলশীদ, শেরপুর-সিলেট ও মারকুলী, মনুর রেলওয়ে ব্রিজ ও মৌলভীবাজার, খোয়াইয়ের হবিগঞ্জ ও বাল্লাহ, গোমতীর দেবীদ্বার, হালদার নারায়ণহাট ও পাঁচপুকুরিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার আগের ৯ ঘণ্টায় দেশের উজানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়নি। তবে এর মধ্যে বরগুনার আমতলীতে ৩১, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ২১, বান্দরবানের লামায় ২৬, পিরোজপুরের নাজিরপুরে ১৬, কুষ্টিয়ায় ১৩ ও সাতক্ষীরায় আশাশুনিতে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরার অভ্যন্তরীণ অববাহিকাতে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত দেখা যায়নি।
কেন্দ্রের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, উজানের নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বর্তমানে পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই; এই সময়ে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের নদীগুলোর পানির সমতল কমতে পারে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্র।
আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ১৫ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এই অঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী ও ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে আগামী ১৫ ঘণ্টায় কুমিল্লার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আগামী ১৫ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এ অঞ্চলের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরী, কর্ণফুলী, হালদা ও অন্যান্য প্রধান নদীরর পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ অবস্থান করছে বলে তথ্য দিয়েছে কেন্দ্র।
এর প্রভাবে আগামী ১৫ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে, যার ফলে এই অঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।