নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া এবং এছাড়া মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ সকল ধর্মের উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
Published : 30 Jul 2024, 12:16 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সরকারি উদ্যোগে দেশজুড়ে শোক পালন করা হচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন। মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকই কালো ব্যাজ ধারণ করে অফিস করছেন।
এছাড়া নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া এবং এছাড়া মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ সকল ধর্মের উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে ছয় নম্বর ভবনের নিচে ক্যান্টিনে কথা হয় শ্রম মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মচারীর সঙ্গে। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কালো ব্যাজ একটা আনুষ্ঠানিকতা। আমাদের মনে অনেক কষ্ট। এত সম্পদের ক্ষয় হয়ে গেল। এতো মানুষের প্রাণহানি ঘটল। এই দেখে যে কারো মন খারাপ হবে।”
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, “প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আমরা কালো ব্যাজ ধারণ করেছি। সাম্প্রতিক এই ঘটনায় অনেক প্রাণহানি হয়েছে। আমাদের ছোট অর্থনীতির দেশ। অর্থনীতিতে বড় আঘাত এসেছে। এগুলো কারোরই কাম্য ছিল না। আমরা চাই দেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। দেশের উন্নয়নে অনেক কাজ এখনো বাকি।”
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সারাদেশে শোক পালনের এই সিদ্ধান্ত হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সেখানে বলা হয়, “কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আগামী ৩০ জুলাই মঙ্গলবার সারাদেশে শোক পালন করা হবে।”
তবে এটা যে রাষ্ট্রীয় শোক নয়, তা স্পষ্ট করেছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার সকালে ওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভার শুরুতে তিনি বলেন, "আজকের দিনটি ঠিক রাষ্ট্রীয় শোক দিবস নয়, এটা সরকারিভাবে শোক পালন, জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় নয়।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরেন বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বলেছিলেন ১৪৭ জন। আজকে (সোমবার) আরও বোধহয় তিনজন যোগ হয়েছে। তিনি ১৫০ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছেন।”
সরকারের হিসাবে দেড়শ মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হলেও সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার খবর এসেছে, যাদের অনেকে শিক্ষার্থী।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্ররা চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকে ফের মাঠে। ধীরে ধীরে তাদের আন্দোলনের মাত্রা ও ব্যপ্তি বাড়তে থাকে।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘাতের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুর থেকে ৬ জনের মৃত্যুর খবর আসে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা হয়, সেদিন মাঠে নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। গোটা দেশে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পদে হামলা শুরু হয়। প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
রামপুরায় বিটিভি ভবন, মেট্ররেলের দুটি স্টেশন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাব স্টেশন, মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনেও ভাঙচুর হয় সেদিন।
পরদিন পরিস্থিতির অবনতি হলে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করা হয় সারা দেশে। দুই দফায় তিন দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে পুরো দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় কারফিউ শিথিল করে অফিস-আদালত ও কলকারখানা আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলাচল শুরু হলেও ট্রেন চলাচল এখনো বন্ধ আছে।