“৫০ ভাগের বেশি নারী শিক্ষার্থী হলেও নেতৃত্বের ভূমিকায় তারা এত কম কেন? এসব নারীরা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে? সেই জায়গাতে কাজ করা দরকার,” বলেন আসিফ সালেহ।
Published : 15 Feb 2024, 11:45 PM
নারী-পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ, কিন্তু বহু পথ এখনো বাকি; সেই যাত্রায় নানান মতের মিলন ঘটাতে চায় ব্র্যাক।
এ যাত্রার পথ নির্দেশ পেতে বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে বহু মত, পথ ও পেশার মানুষদের নিয়ে আড্ডার আয়োজন করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি।
অধিকারকর্মী থেকে শুরু করে এ আয়োজনে যোগ দেন শিক্ষক, সমাজকর্মী, নারী আন্দোলনের নেত্রী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
‘বাধা সরিয়ে সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজন করা হয় ওই চা-চক্রের; আড্ডা আর মিলনমেলার শেষে মঞ্চায়ন করা হয় নাটক ‘লাভ লেটারস’।
কোন প্রেক্ষাপটে নানা মতের মানুষকে একই মোর্চায় আনার লক্ষ্য নিয়েছে ব্র্যাক, তা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এবং জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী।
সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এমন আয়োজন করার কথা বলেন নবনীতা চৌধুরী; জীবনের শেষ প্রান্তে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের সামাজিক আন্দোলনের পরামর্শের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
নবনীতা বলেন, শিক্ষায় সমতা অর্জন করলেও চাকরিতে নারীদের পিছিয়ে থাকা, শতকরা ৫৩ ভাগের বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া এবং রাস্তাঘাটে-কর্মস্থলে হয়রানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনো কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
সমতার জন্য নারীদের যে সুযোগ দরকার, তার ভিত্তি হিসাবে ব্র্যাক বলছে, ‘সুযোগ হচ্ছে চশমার মতো; সবার আলাদা আলাদা প্রয়োজন, কারও হয়তো প্রয়োজনই হয় না!’
নানা মতের মিশেলে গড়ে তোলা কোয়ালিশন কীভাবে কাজ করতে পারে, তার ধারণা দিয়ে আসিফ সালেহ্ বলেন, “বিশেষ করে যারা একই রকম চিন্তায় বিশ্বাস করি, তাদেরকে একসাথে কাজ করতে হবে, নারী-পুরুষ সবাইকে।”
তিনি বলেন, জেন্ডার সমতার বিষয়টি নতুন ধাপে চলে এসেছে এবং সেটাকে সামাজিকভাবে, সবার মাঝে পুরুষতান্ত্রিক যে রীতিগুলো আছে, সেই জায়গাতে যদি আমরা আঘাত করতে না পারি; সেই জায়গাতে ছেলে ও মেয়েরা একসাথে এগিয়ে না আসে, তাহলে পরবর্তী ধাপ অর্জন করা যাবে না।
“সেই জায়গায় আমাদের পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে, বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করতে হবে, সমান-উত্তরাধিকার নিয়ে কাজ করতে হবে, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরিতে কাজ করতে হবে।”
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, “এই যে ৫০ ভাগের বেশি নারী শিক্ষার্থী হলেও নেতৃত্বের ভূমিকায় তারা এত কম কেন? এসব নারীরা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে? সেই জায়গাতে কাজ করা দরকার।”
আড্ডা আয়োজনে অধ্যাপক রওনক জাহান, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইয়াসমিন হকের মত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা যেমন ছিলেন, ছিলেন অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীনের মত বর্তমানরাও।
অধিকারকর্মীদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর, রাশেদা কে চৌধূরী, মালেকা বেগম, শিফা হাফিজা, শাহীন আনামসহ অনেক উপস্থিত হন ওই আড্ডায়।
চা-চক্রে অংশ নেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরীও।
গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, যমুনা টেলিভিশনের সিইও ফাহিম আহমেদ, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, নাগরিক টিভির সােবেক সিইও আব্দুন নূর তুষার ছিলেন সেখানে।
অণুজীব বিজ্ঞানী অধ্যাপক সমীর কুমার সাহার পাশাপাশি তার মেয়ে অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহাও ছিলেন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকেও দেখা গেছে ওই আড্ডায়।
নির্মাতা রেদওয়ান রনি, অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধনকেও দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের সারিতে।
চা-চক্রের ফাঁকে নিজের জায়গা থেকে কী করবেন, কাগজে লিখে সেই অঙ্গীকারের কথা জানান উপস্থিত সবাই। নারী-পুরুষ সমতার প্রতিপাদ্যে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন ছিল অনুষ্ঠানস্থলে।
অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে থিয়েটারের প্রযোজনা ‘লাভ লেটারস’ মঞ্চায়ন করা হয়। মার্কিন নাট্যকার এ আর গার্নির বিখ্যাত নাটক ‘লাভ লেটারস’র বাংলা রূপান্তরে অভিনয় করেন অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদার।