২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পশ্চিম রামপুরার বাসা থেকে আফতাব আহমেদের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
Published : 12 Oct 2022, 12:59 PM
নয় বছর আগে রাজধানীর রামপুরায় ডাকাতি করতে গিয়ে আলোকচিত্র সাংবাদিক আফতাব আহমেদকে হত্যার ঘটনায় পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) অনুমোদন করে এবং আসামিদের আপিল খারিজ করে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেয়।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামি হলেন- আফতাব আহমেদের গাড়িচালক হুমায়ুন কবির মোল্লা এবং ডাকাতিতে জড়িত বিল্লাল হোসেন কিসলু, হাবিব হাওলাদার, রাজু মুন্সি, মো. রাসেল।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ওই পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি আসামি মো. সবুজ খানকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। আসামিদের মধ্যে রাজু মুন্সি ও রাসেল মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
হাই কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারানুম রাবেয়া মিতি। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও হেলাল উদ্দিন মোল্লা। এছাড়া দুই পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এস এম শফিকুল ইসলাম শুনানি করেন।
রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সামিরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রায়াল কোর্ট পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। ওই রায়ই বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।”
২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পশ্চিম রামপুরার বাসা থেকে আফতাব আহমেদের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় মামলা হয় এবং পুলিশ গাড়িচালক হুমায়ুনসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে।
পরে হুমায়ুন, হাবিব ও বিল্লাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে তারা স্বীকার করেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আফতাব আহমেদের বাসায় ডাকাতি করার সময় তাকে গামছা দিয়ে বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তারা।
আসামি বিল্লাল হোসেন কিসলু বাসার ড্রয়ার ভেঙে ৭২ হাজার টাকা লুট করেন। পরে তারা স্থানীয় বৌবাজার এলাকায় গিয়ে টাকা ভাগাভাগি করে নেন।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ এ মামলায় ওই পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রহমান সরদার।
পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি (ডেথ রেফারেন্স) হাই কোর্টে পাঠনো হয়। পাশাপাশি আসামিদের পক্ষ থেকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানি শেষ হলে বুধবারের বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখল উচ্চ আদালত।
২০০৬ সালে একুশে পদক পাওয়া আফতাব দীর্ঘদিন ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রী হিসাবে কাজ করেন। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়ায়। আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসাবে তিনি ইত্তেফাকে যোগ দেন ১৯৬২ সালে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বহু ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন ফটো সাংবাদিক আফতাব।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে তার তোলা জেলে পরিবারের মেয়ে বাসন্তীর জাল পরে লজ্জা নিবারণের ছবি অনেক বিতর্কের জন্ম দেয়।
‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি’, ‘বাংলার মুক্তির সংগ্রাম- সিরাজুদৌল্লা থেকে শেখ মুজিব’, ‘আমরা তোমাদের ভুল না’সহ কয়েকটি বইও লিখেছেন তিনি।