ব্যাংকটির চার হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় করা ৫৯টি মামলার ৫৮টিতেও আসামি জাতীয় পার্টির এই সাবেক সংসদ সদস্য।
Published : 12 Sep 2024, 06:43 PM
বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু এবং তার পরিবারের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা অর্থ আত্মসাৎ ও কর ফাঁকির মামলায় বৃহস্পতিবার এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র জ্যেষ্ঠ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
দুদকের মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাচ্চু ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন বাচ্চুর স্ত্রী শিরিন আক্তার, ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না এবং দুই ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিক।
দুদক ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর এ মামলা করে এবং ২০২৪ সালের ৫ জুন তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আব্দুল হাই বাচ্চু ২০১২ সালের ৮ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার ৬ নম্বর প্লটের ৩০.২৫ কাঠা জমি ১১০ কোটি টাকায় কেনার জন্য চুক্তি করেন।
চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় পরিশোধিত অর্থ ১০ কোটি টাকা। চুক্তিপত্র অনুযায়ী দুটি দলিলে ভূমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। যার মধ্যে ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম দলিলে ১৮ কাঠা জমির দাম ৯ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে গ্রহীতা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও শিরিন আক্তার।
দ্বিতীয় দলিলে ওই একই বছরে ১২.২৫ কাঠার দাম ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। যেখানে গ্রহীতা হলেন শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। অর্থাৎ জমির মোট রেজিস্ট্রেশন মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। রেজিস্ট্রেশনে মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দেখিয়ে অবৈধ আয় গোপন করার চেষ্টা করেছেন তিনি।
এছাড়া জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারের ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার রাজস্বও ফাঁকি দিয়েছেন।
আরও যত অভিযোগ
জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে এক সময়ের লাভজনক ব্যাংক বেসিকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।
এরপর থেকে ব্যাংকটির ঢাকার গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখায় বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনার ঘটনা ঘটতে থাকে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একসময় ভালো অবস্থানে থাকা বেসিক ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের খবর সামনে এলে ব্যাংক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। আব্দুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালে বেনামি ও ভুয়া ঋণ দিয়ে বিপুল এসব অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।
সংবাদমাধ্যমে একের পর এক এসব খবর প্রকাশিত হলে দুদক তদন্তে নেমে ঋণ অনিয়মের ঘটনা খুঁজে পায়। পরে এসব ঘটনায় দুই হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৯টি মামলা করে।
এগুলোতে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ঋণ গ্রহীতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়। তবে তখন সাবেক চেয়ারম্যানকে বাদ দেওয়া হয়। যদিও বিভিন্ন সময় তাকে দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে ৫৮টিতে আসামি করা জয় তাকে।
এসব মামলায় দুদকের অনুসন্ধানপত্রে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়া, ভুয়া মর্টগেজ, সম্পদের অতি মূল্যায়ন ও মর্টগেজ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বেসিক ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেছেন ও সহায়তা করেছেন।
দুদকের পাঁচজন কর্মকর্তা এসব মামলা অনুসন্ধান করে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের এসব ঘটনা ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আব্দুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে ঘটেছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর।
সংবাদ মাধ্যমে এসব ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করলে ২০১৪ সালে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলাম ও উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোনায়েম খানকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে। পরে আব্দুল হাই বাচ্চু পদত্যাগ করেন বেসিক ব্যাংক থেকে।
এসব অনিয়মের বিষয় সামনে আসার পর আবদুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান।