ইভিএমে ‘বিব্রত’ ইসি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) চিঠি চালাচালির মধ্যে পড়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি ত্রুটি আর সারানো হয়ে উঠছে না।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2015, 06:23 AM
Updated : 14 May 2015, 06:23 AM

বুয়েট তাদের সর্বশেষ চিঠিতে কমিশনের বিরুদ্ধে ইভিএম ব্যবহারে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

অবশ্য বুয়েটের অভিযোগ খণ্ডন করে কমিশন বলছে, চুক্তি লঙ্ঘনের মতো কোনো ঘটনা তারা দেখছে না।

২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, ২০১২ সালে নরসিংদী পৌরসভা ও ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি করে ইভিএম কন্ট্রোল ইউনিটে ত্রুটি দেখা দিলে ভোটগ্রহণে জটিলতা তৈরি হয়।

ইভিএমগুলো বুয়েটের ব্যুরো অফ রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন (বিআরটিসি) পরিচালকের কাছে পাঠিয়ে ত্রুটি চিহ্নিত করতে গতবছর অনুরোধ জানায় ইসি।

কিন্তু এসব ইভিএমে নিয়ম ভেঙে দেশীয় ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে জানিয়ে কোনো সমাধান ছাড়াই গত মার্চে ইভিএমগুলো কমিশনকে ফেরত দেয় বুয়েট।

এক চিঠিতে বুয়েটের পক্ষ থেকে বলা হয়, “ইভিএমের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য দেশীয় বা লোকাল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই এ কন্ট্রোল ইউনিট সঠিকভাবে কাজ না করার কারণ চিহ্নিত করার বিষয়টি চুক্তির বাইরে চলে যায়। এ বিষয়ে বুয়েটের পক্ষে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না এবং কন্ট্রোল ইউনিটটি কমিশনে ফেরত পাঠানো হয়।”

গত ৭ মে নির্বাচন কমিশনের মেনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মো. ইকবাল জাভীদ বিআরটিসি পরিচালককে ফের চিঠি দিয়ে ইভিএমের কারিগরি ত্রুটি পরীক্ষা করে একটি ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন’ জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে ‘চুক্তি লঙ্ঘনের’ অভিযোগের ব্যাখ্যাও দেন তিনি।

চিঠিতে বলা হয়, “ইভিএম ফেরত পাঠানোয় নির্বাচন কমিশন বিব্রত অবস্থায় পড়েছে। রাজশাহীতে ব্যবহৃত কন্ট্রোল ইউনিটে কখনোই দেশীয় ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়নি। এখানে কীভাবে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছে তা বোধগম্য নয়।”

এর আগে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে বুয়েটের অধ্যাপক এস এম লুৎফুল কবীরের তত্ত্বাবধায়নে ইভিএমে বিদেশি ব্যাটারি ব্যবহার করার পরও একই সমস্যা দেখা দেয় এবং তা দিয়ে ভোট গণনা সম্ভব হয়নি বলে কমিশনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

২০১০ সালে ইভিএমের যাত্রাকালে বুয়েটের আইআইসিটির পরিচালক এ শিক্ষকই অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

দেশীয় ব্যটারি ব্যবহার নিয়ে বুয়েটের আপত্তি থাকলেও তাতে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হচ্ছে না বলে দাবি ইসির।

কমিশন বুয়েটকে জানিয়েছে, “২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে দেশীয় ব্যাটারি ব্যবহার করে কোনো ত্রুটি দেখা যায়নি; ভোট নেওয়া ও গণনাতেও অসুবিধা হয়নি। রাজশাহীর ইভিএম এর ত্রুটিও ব্যাটারিজনিত নয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে।”

বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি শাখার সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিশনের অবস্থান তুলে ধরে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বুয়েটকে। আশা করি, এবার সন্তোষজনক সাড়া পাব আমরা।”

গত ১৮ মার্চ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম নির্বাচনের তফসিল দেওয়ার সময়ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ চার সিটি নির্বাচনের সময় ইভিএমে সমস্যা দেখা দেওয়ার কথা বলেছিলেন।

সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইভিএম ব্যবহার করা হবে না বলেও সে সময় জানান তিনি।