ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত হবে: হাসিনা

সিটি নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির যে অভিযোগ এসেছে, তার তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2015, 02:51 PM
Updated : 29 April 2015, 05:25 PM

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নবনির্বাচিত দুই মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিয়ে বুধবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে একথা জানান তিনি।

মঙ্গলবার তিন সিটিতে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট বর্জনের পর তা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুন।

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের এই ভোট জালিয়াতির অভিযোগের সপক্ষে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। 

তাদের আহ্বানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে সমস্যা, ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করব, খতিয়ে দেখব। কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল আমার হাতে আসবে। কে কত ভোট পেয়েছে তা দেখতে পারব।”

মঙ্গলবার তিন সিটি করপোরেশনের আড়াই হাজার কেন্দ্রের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে জাল ভোট দেওয়ার দৃশ্য সাংবাদিকদের ক্যামেরায়ও ধরা পড়েছে। 

ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ভোটে ‘সামান্য’ কিছু ত্রুটি ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ৪০-৫০টি ‘ঘটনা’ ঘটেছে।

১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি করপেরেশন নির্বাচনের পর দিন লালবাগে গুলিবর্ষণে সাতজনের মৃত্যুর ঘটনা, দশম সংসদ নির্বাচনের সময় ৫৮২টি কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এর সঙ্গে তুলনা করলে, এই নির্বাচন খুবই সুষ্ঠু হয়েছে।

“হয়ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। সাতাশশ’ কেন্দ্রের মধ্যে দুটি বন্ধ হয়েছে। ৪০/৫০টি জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। ওই কেন্দ্রগুলোতে কিছুক্ষণ ভোট ছিল, তারপর আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।”

আগামীতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রযুক্তিনির্ভর হওয়া উচিত।”

‘কারচুপি হলে ভোট কম কেন’

তদন্তের কথা বললেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগকারীদের ভোটের হারের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।

তিন সিটি করপোরেশনে ৪৪% ভোট পড়ার চিত্র ‍তুলে ধরে তিনি বলেন, “কারচুপি হলে এত কম ভোট হবে কেন?”

এই প্রসঙ্গে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুরে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর একটি নির্বাচনী কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ ভোট থাকলেও ২ হাজার ৮০০ ভোট পড়ার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

প্রার্থীদের পক্ষে বিএনপির অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “এই অল্প (বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত) সময়ের মধ্যে মির্জা আব্বাস ২ লাখ ৯৪ হাজার ভোট পেল কী করে? এত অল্প সময়ে এত ভোট পড়লে কীভাবে “

ঢাকা উত্তরেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালেরও ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট পাওয়ার তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে জনগণকে হত্যা করার পরও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ‘এত’ ভোট পায় কিভাবে?

“যারা সমালোচনা করছে, তাদের জবাব দিতে হবে। যে পত্রিকা লিখেছে, ‘ভোট কারচুপির উৎসব’, তাদের জবাব দিতে হবে, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এত ভোট পেল কোথা থেকে?”

কোনো সংবাদপত্রের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “যারা তাদের পক্ষে, তাদেরই মনে হবে গণতন্ত্রের পরাজয়।”

মঙ্গলবার ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ী হওয়াকে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ ও ‘গণমানুষের বিজয়’ বলেন শেখ হাসিনা।

নির্বাচনে আসার পর ভোটগ্রহণের মাঝ পর্যায়ে বিএনপির সরে যাওয়ার নেপথ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নস্যাতের উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করেন তিনি।

“এটাই একমাত্র উদ্দেশ্য। এজন্যই, তারা এই খেলা খেলেছে। এছাড়া নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোনো উদ্দেশ্য নাই।”

বিজয়ীদের অভিনন্দন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে বিজয়ী আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে বিজয়ী সাঈদ খোকন সপরিবারে গণভবনে গিয়ে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তাদের সঙ্গে নবনির্বাচিত কাউন্সিলররাও যান।

গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে প্রধানমন্ত্রীর ডানদিকে বসেন সাঈদ খোকনের মা। তার পাশে বসা ছিলেন সাঈদ খোকন।

প্রধানমন্ত্রীর ডানদিকে বসেন আনিসুল হক। তাদের পেছনে বসেন নির্বাচিত দুই মেয়রের পরিবারের সদস্যরা।

বক্তব্যের শুরুতেই দল সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক এবং সাঈদ খোকনকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। পাশাপাশি প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সবাইকে অভিনন্দন জানান তিনি।

বক্তব্যের পর মেয়ররা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রীও তাদের হাতে ফুল তুলে দেন।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সঙ্গে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনী মেয়র পদে বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিনও গণভবনের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চেয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাকে এখন স্থানীয়দের সঙ্গে সময় কাটানোর পরামর্শ দিয়ে পরে আসতে বলেন।