বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় দেওয়া ঢাকার সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল মারা গেছেন।
Published : 11 Dec 2014, 10:54 AM
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক সাহেদুল আলম জানান।
বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা নিয়ে কাজী গোলাম রসুল গত ২৭ নভেম্বর থেকে এ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর ।
কাজী গোলাম রসুলের জন্ম বেগমগঞ্জে। গত শতকের সত্তরের দশকের শেষ দিকে তিনি জুডিশিয়াল অফিসার (বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা) হিসাবে যোগ দেন।
১৯৯৮ সালে ঢাকা জেলা দায়রা জজ হিসাবে অবসর নেওয়ার পর তিনি সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসাবে কাজ করেছেন গোলাম রসুল। তিনি স্ত্রী, তিন মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার মেয়ের স্বামী শহীদুল ইসলাম জানান, আসরের নামাজের পর কাকরাইলের সার্কিট হাউজ রোড জামে মসজিদে কাজী গোলাম রসুলের জানাজা হয়। তার দাফন হবে বনানী কবরস্থানে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সাবেক বিচারকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী কাজী গোলাম রসুলকে শেষবারের মতো দেখতে সকালেই হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান এবং তাদের সমবেদনা জানান।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার ২৩ বছর বছর ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর এই হত্যা মামলায় ২০ আসামির ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল।
রায়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর দুটি রেজিমেন্টের অল্প সংখ্যক জুনিয়র সেনা অফিসার/সদস্য ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেন ওই কতিপয় সেনা সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ/নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেনি তা বোধগম্য নয়। এ ঘটনা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সেনাবাহিনীর জন্য একটি চিরস্থায়ী কলঙ্ক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”
আসামিপক্ষের আপিলে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাই কোর্ট এ মামলায় বিভক্ত রায় দেয়। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। অন্য বিচারপতি এ বিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির ফাঁসির আদেশই বহাল রাখেন।
২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাই কোর্টের তৃতীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন।
পাঁচ আসামি আপিল করলে ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ তা খারিজ করে এবং পরের বছর ২৮ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
রায় কার্যকর হওয়ার পর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক গোলাম রসুল বলেছিলেন, এখন থেকে আর কেউ এমন জঘন্যতম অপরাধ করার সাহস পাবে না।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, “বিচারকাজে দীর্ঘ সময় একসাথে কাজ করেছি আমরা। উনি এমন নিষ্ঠাবান এবং দায়িত্বশীল বিচারক ছিলেন যে তার দেয়া রায়ই পরবর্তীতে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ বহাল রাখে।”