ফারুকী হত্যা: খুনিরা চিহ্নিত হয়নি ২ মাসেও

টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নুরুল ইসলাম ফারুকী নিজের বাসায় খুন হওয়ার পর প্রায় দুই মাস হতে চললেও ওই হত্যাকাণ্ডের কোনো কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। 

গোলাম মুজতবা ধ্রুব নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2014, 04:34 AM
Updated : 23 Oct 2014, 04:34 AM

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোনো তথ্য মেলেনি।

শুরু থেকেই জঙ্গিগোষ্ঠীকে সন্দেহ করে আসা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তদন্তে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের সম্পৃক্ত খোঁজার কথা বলেছেন। তবে এর মধ্যে কোন সংগঠন বা কারা দায়ী- তার মীমাংসা তারা এখনো করতে পারেননি।

এদিকে ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ হিসাবে ছয় টেলিভিশন উপস্থাপকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা।

ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুকী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতেরও কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। চ্যানেল আইয়ের ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’ নামে দুটি ইসলামী অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন তিনি।

গত ২৭ অগাস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সুন্নিবাদী এই নেতাকে হত্যার পেছনে কোনো উগ্রপন্থী সংগঠন জড়িত।

নুরুল ইসলাম ফারুকী

নুরুল ইসলাম ফারুকীর ছোট ছেলে ফয়সাল ফারুকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আক্ষেপ  করে বলেন, “পুলিশ দেড় মাস আগে শেষ আমাদের বাসায় এসেছিল। তারা তদন্তের জন্য যেসব  তথ্য চেয়েছে তার সবই আমরা দিয়েছি। প্রায় দুই মাস হয়ে গেল, খুনিদের তারা গ্রেপ্তার করতে পারল না।”

হত্যার রাতেই ফয়সাল অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এছাড়া ইসলামী ফ্রন্টের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার ছয় টিভি উপস্থাপককে দায়ী করে গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে আরেকটি মামলা করেন। বিচারক থানায় দায়ের করা ফারুকীর ছেলের মামলার সঙ্গে যুক্ত করে বিষয়টি একসঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেন।

এই ছয় উপস্থাপক হলেন- এনটিভি ও এটিএন বাংলার ইসলামী অনুষ্ঠানের আলোচক জামায়াতের রুকন তারেক মনোয়ার ও নরসিংদী জামায়াতের সাবেক আমির কামাল উদ্দিন জাফরী; দিগন্ত ও পিস টিভির ইসলামী অনুষ্ঠানের আলোচক কাজী ইব্রাহীম; এটিএন বাংলার ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আরাকানুল্লাহ হারুনী; আরটিভি ও রেডিও টুডের উপস্থাপক খলেদ সাইফুল্লাহ বখশী এবং বাংলাভিশনের ‘কোরানের আলো’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মুখতার আহমদ।

আর্জিতে এই ছয়জনকে ফারুকী হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ হিসাবে উল্লেখ করেন তুষার।  

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ছয় টেলিভিশন উপস্থাপক ফারুকী ভাইকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করা তো দূরের কথা জিজ্ঞাসাবাদও করেনি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুলহাস আকন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফারুকী হত্যার আসল খুনিরা ধরা পড়লে ছয় টেলিভিশন উপস্থাপককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। তারা পুলিশের সন্দেহের তালিকায় আছে। তবে তারা নজরবন্দি নেই।”

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ‘নিয়মিত’ নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, হত্যা রহস্য উদঘাটনেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো জঙ্গিগোষ্ঠিই যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়ে তারা ‘অনেকটাই নিশ্চিত’। পুলিশ এখন ‘তাদেরই’ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

“জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা এ হত্যায় সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে তদন্তে বেরিয়ে আসছে। তবে এ দুই সংগঠনের কারা হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল- তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।”

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে দুই জন এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাদের মধ্যে মাহমুদা খাতুন নামের এক নারীও আছেন যিনি খুনের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে ফারুকীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তার আচরণ সন্দেহজনক ছিল বলে ফারুকীর পরিবারের দাবি।

পুলিশ মাহমুদাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি।

ফরুকীর খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে সারাদেশে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে ইসলামী ফ্রন্ট, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও ইসলামী ছাত্র সেনা।

ফয়সাল ফারুকী বলেন, “সব মিলিয়ে আমাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। তারপরও আমরা অপেক্ষা করছি, খুনিরা যেন ধরা পড়ে।”