ফারুকী হত্যা পরিকল্পিত, দায়ী উগ্রপন্থীরা: পরিবার

ধর্মীয় উগ্রবাদীরা পরিকল্পিতভাবে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যা করেছে বলে মনে করছে তার পরিবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2014, 09:36 AM
Updated : 3 Sept 2014, 02:50 PM

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় ফারুকীর পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলা হয়।

লিখিত বক্তব্যে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে নিহতের মেঝ ছেলে আহমদ রেজা ফারুকী বলেন, “আমরা অপেক্ষা করতে রাজি আছি। তবু চাই হত্যা মামলাটির তদন্ত যেন থেমে না যায়।”

এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফারুকীর ব্যক্তিগত জীবনের দিকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সত্যতা নাকচ করে তিনি বলেন, “পারিবারিক বা ব্যবসায়িক বিরোধে আব্বা খুন হননি। আমরা পরিবারের সদস্যদের সবার সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করি।”

রেজা ফারুকী বলেন, “আমার আব্বা সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। হত্যার আগে তাকে তার মতাদর্শের বিরোধীরা মোবাইল ও ফেসবুকে হত্যার হুমকি দেয়। উগ্রবাদীদের হাতে তাকে নিহত হতে হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”

তবে তদন্তের আগে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ইসলামিক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না বলে জানান তিনি।

গত ২৭ অগাস্ট রাতে রাজাবজারের বাসায় হামলায় নিহত ফারুকী ছিলেন ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যে সংগঠনটি জামায়াত-হেফাজতবিরোধী। পাশাপাশি তিনি চ্যানেল আইয়ে ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’ শিরোনামে দুটি অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করতেন।

বাবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় নতুন করে দুটি ধারা যোগ করার অনুরোধ জানান রেজা।

নুরুল ইসলাম ফারুকী

তিনি বলেন, “আমার আব্বাকে যখন হত্যা করা হয় তখন আমার বড় ভাই মাসুদ রেজা ফারুকী চাকরি সূত্রে নেদারল্যান্ডসে ছিলেন। হজের কারণে আমি সৌদি আরবে ছিলাম। তখন  পুলিশ মামলার এজাহার তৈরি করে আমার ছোটভাই ফয়সাল ফারুকীকে দিয়ে সই করিয়ে নেয়।

“ফয়সাল বয়সে ১৮ হলেও মামলা সম্পর্কে তার ধারণা কম ছিল। তাই এখন আমরা মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারা যুক্ত করতে অনুরোধ করছি।”

ফারুকী নিহতের পর তার ছোট ছেলে ফয়সাল ফারুকী রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন, যাতে ডাকাতির কথাও বলা হয়।

কয়েকটি টেলিভিশনের ইসলামী অনুষ্ঠান উপস্থাপকের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার অভিযোগে ইসলামী ছাত্র সেনার কর্মীদের মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তদন্তে যা বেরিয়ে আসবে আমরা তা গ্রহণ করে নেব। তার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

স্বল্প সময়ে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে সংশয় রয়েছে ফারুকীর পরিবারের সদস্যদের।

রেজা ফারুকী বলেন, “দেশে অনেক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হলেও মাঝপথে তদন্তে ধীর গতি দেখা যায়। তাই এ ঘটনাটির তদন্ত থেমে যেতে পারে এমন আশঙ্কা তো হতেই পারে। কিন্তু সরকারের কাছে দাবি করে বলছি, এমনটি যেন না হয়।”

তবে পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীয় ভূমিকায় সন্তোষ জানিয়েছেন তিনি।

“আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২৪ ঘণ্টা আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। এ হত্যার রহস্য উন্মোচনে প্রায় প্রতিদিন আমাদের কাছে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”

ফারুকীর দুই স্ত্রী। রাজাবাজারের যে বাসায় তিনি খুন হন সেখানে ছোট স্ত্রী লুবনা ইসলাম ও তার তিন ছেলে নিয়ে থাকতেন। তার অন্য স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকেন মালিবাগে।

মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারা যুক্ত করতে ফারুকী পরিবারের অনুরোধের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি আব্দুল মমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কার্যবিধির ৩০২ ধারার ব্যাখ্যায় শুধু হত্যার কথা বলা হয়েছে। আর ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে একই উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করার কথা।

আর ফারুকী হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৯৬ ধারায়, যার ব্যাখ্যায় হত্যাসহ ডাকাতির কথা বলা হয়েছে।

“ফারুকী হত্যা এবং ডাকাতির ঘটনায় ৩৯৬ ধারাই প্রযোজ্য। এজাহারের অভিযোগের সবটাই এই ধারা পূরণ করে।”

ওসি বলেন, “মামলার বাদী এজাহারে ডাকাতি এবং হত্যার কথাই বলেছেন। যদি এজাহারে শুধু পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথা বলা হতো, কোনো সম্পদ ডাকাতির কথা না থাকত, তা হলে কার্যবিধির ৩০২/৩৪ ধারা দেয়া হতো।”

তবে তদন্তে যদি প্রমাণ হয় যে হত্যাটি পরিকল্পিত ছিল এবং কোনো সম্পদ ডাকাতি হয়নি, তাহলে মামলার অভিযোগপত্রে ৩০২/৩৪ ধারা প্রযোজ্য হবে বলে জানান তিনি।