সীমাহীন দুর্ভোগে ইউনাইটেডের যাত্রীরা

চেয়ারম্যানের পদত্যাগের এক দিনের মাথায় বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2014, 11:26 AM
Updated : 25 Sept 2014, 03:39 PM

আগে থেকে জানতে না পারায় অনেকেই মালপত্র নিয়ে বিমানবন্দরে এসে বিপাকে পড়েন। এ ধরনের ক্ষেত্রে টিকেটের টাকা ফেরত দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা না পেয়ে তাদের অনেকেরই যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

ইউনাইটেডের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিনুর আলম যাত্রী ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে টিকেটের টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারে ইউনাইটেডের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য্য ধরতে অনুরোধ করেছেন।

ব্যবসা বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা নেই বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনস) এস এম নাজমুল আনাম বলছেন, ইউনাইটেডের নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি গুছিয়ে নেয়ার জন্য তাদের কাছে সময় চেয়েছেন। সেই সুযোগ তারা দিতে চান। 

বুধবার সন্ধ্যায় ইউনাইটেডের সব ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়ে কর্মচারীদের পক্ষে এক  সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন এম ইলিয়াস বলেন, “ফ্লাইট পরিচালনা করতে যে খরচ হয় এই মুহূর্তে সেই খরচ নির্বাহের অর্থ ইউনাইটেডের নেই। এই অবস্থায় ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব নয়।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ঘোষণার আগেই ইউনাইটেডের নির্ধারিত ফ্লাইটগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ছয়টি ফ্লাইট ছাড়ার কথা থাকলেও কোনটিই ছেড়ে যায়নি।

সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অসহায়ভাবে ছুটোছুটি করতে দেখা যায় মো. ফরিদ আকন্দ নামের এক যাত্রীকে।

তিনি জানান, বুধবার রাত সোয়া ১০টায় ইউনাইটেডের ফ্লাইটে তার ওমানে যাওয়ার কথা ছিল। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা থেকে রাত ৮টায় বিমানবন্দরে এসে তিনি জানতে পারেন ফ্লাইট যাবে না।

“আমি এসে বিমানবন্দরে ইউনাইটেডের কোনো কর্মীকে পাইনি। আমার মতো বহু যাত্রী সারা রাত অপেক্ষা করেছেন। আমাদের কোনো সুরাহা করা হয়নি।”

বেসরকারি এ বিমান সংস্থাটির বেশিরভাগ ফ্লাইট পরিচালিত হতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। আর মধ্যপ্রাচ্যেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। ইউনাইটেডের টিকেট কাটা অনেকেই এসব দেশে শ্রমিকের কাজ করেন।

হযরত আলী নামে মাস্কটগামী এক যাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজই আমার ওমানে কাজে যোগ দেয়ার কথা ছিল। এতোগুলো টাকা টিকেটে আটকা পড়ল। এখন কি করব বুঝতে পারছি না।”

ইউনাইটেডের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুসারে, ঢাকা-মাস্কট টিকিটের ন্যূনতম মূল্য ২৭ হাজার টাকা।

মো. কাঞ্চন নামের আরেক যাত্রীকে বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালের বাইরে ব্যাগ ও কাগজপত্র নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। তারও ইউনাইটেডে ওমানে যাওয়ার কথা ছিল।

“ওখানে যাওয়ার জন্য মাত্র ১০দিনের ভিসা আছে। অন্য কোনো টিকেট কাটার মতো অবস্থাও নেই। কি করব বুঝতে পারছি না।”

টাঙ্গাইলের আরশাদ মণ্ডল ওমানে যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে আড়াই লাখ টাকা খরচ করেছেন জমি বিক্রি করে। ইউনাইটেডের কারণে তারও মাথায় হাত পড়েছে। 

“জমি বিক্রি করে এখন যদি যেতে না পারি, মরা ছাড়া আমার কোনো উপায় থাকবে না।”

ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনস) এস এম নাজমুল আনাম বলেন, “তারা আমাদের কথা দিয়েছে কয়েকদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করবে।”

এরপরেও পরিস্থিতি না বদলালে ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবা হবে বলে জানান তিনি। 

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ২০০৫ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে বিমান পরিচালনা করার লাইসেন্স দেয়। তার দুই বছর পর যাত্রী পরিবহন শুরু করে বিমান সংস্থাটি।

বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কয়েক দফা সময় বেঁধে দেয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে। তারপরও তা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিলেরও হুমকি দেয়া হয়।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিষ্ঠানটির মোট বকেয়া ৮৪ কোটি টাকা।

ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুট জেদ্দা, দুবাই, মাস্কাট, কুয়ালা লামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কাঠমুন্ডু, কলকাতা এবং চট্টগ্রাম থেকে মাস্কাট ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

আন্তর্জাতিক রুট ছাড়াও ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ সব রুটে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর, ঈশ্বরদী ও বরিশালেও রয়েছে ইউনাইটেডের ফ্লাইট, যদিও এর যাত্রী সেবার মান নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। 

ইউনাইটেডের বহরে রয়েছে একটি ড্যাশ-৮, তিনটি এটিআর-৭২, পাঁচটি এমডি-৮৩ এবং দুটি এয়ারবাস-৩১০ সহ মোট ১১টি উড়োজাহাজ।