মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির ঘটনা তদন্তে আরও পাঁচ কার্য দিবস সময় দেওয়া হয়েছে কমিটিকে। এনিয়ে তৃতীয় দফায় সময় বাড়ানো হল।
Published : 08 Sep 2014, 10:03 AM
পিনাক দুর্ঘটনা তদন্তে কেন জাতীয় কমিটি নয়: হাই কোর্ট
পিনাক মালিক ও ছেলেকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার কমিটির পক্ষ থেকে আরেক দফা সময় বাড়ানোর আবেদন করায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় তা মঞ্জুর করে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গত শুক্রবার মুন্সীগঞ্জ জেলগেটে দেড়ঘণ্টা ধরে পিনাক-৬ মালিক আবু বক্কর কালু ও তার ছেলে ওমর ফারুক লিমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের জবানবন্দি থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তা যাচাই বাছাই ও দলিলপত্র সংগ্রহের জন্য সময় বৃদ্ধি ছিল জরুরি। তাই তৃতীয় দফা সময় বাড়ানো হয়েছে।”
শনিবার লঞ্চ মালিক পক্ষের এক প্রতিনিধি তদন্ত কমিটির কাছে বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিয়েছেন।
কমিটির সদস্যরা জানান, ইনল্যান্ড শিপিং অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর ৪৫ (৩) ধারায় গঠিত সরকারের একমাত্র এই তদন্ত কমিটি লঞ্চ দুর্ঘটনার সঠিক কারণ ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করছে। যেহেতু আইন মোতাবেক সরকার তদন্ত কমিটি করেছে, তাই মামলার বাইরেও এই তদন্তে যারা দায়িত্বে অবহেলা এবং দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে কমিটি সম্পূরক মামলা করতে পারবে।
ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আরও বলেন, “কারা কারা এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে তা সবই সুষ্ঠুভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। কমিটির আরেক সদস্য বুয়েটের শিক্ষক গৌতম কুমার সাহা নকশায় ত্রুটি শনাক্ত করেছেন।”
গত ৪ অগাস্ট দুর্ঘটনার দিন সাত সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তের ১০ কার্য দিবস শেষে গত ১৮ অগাস্ট আরো তদন্তের জন্য প্রথম দফায় সময় বাড়ানো হয়, পরে ২৭ অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান যুগ্ম সচিব নুর-উর-রহমান। ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ও প্রকৌশলী গৌতম ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিআইডব্লিউটিএর ইঞ্জিনিয়ার ফিরোজ আহমেদ, বিআইডব্লিউটিসির প্রতিনিধি আব্দুল রহিম তালুকদার ও মুন্সীগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার এবং কমিটির সদস্য সচিব সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও সার্ভেয়ার ক্যাপটেন জসিম উদ্দিন।
ঈদ ফেরত যাত্রীদের চাপের মধ্যে গত ৪ অগাস্ট মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া ঘাটে আসার পথে ডুবে যায় এমএল পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি।
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনতা ও পুলিশ ঘাটের স্পিডবোটে করে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সে সময় আনুমানিক ১১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পরে ভাটি অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার হয়। সরকারি হিসাবে এখনও নিখোঁজ রয়েছে ৬১ যাত্রী।
দুর্ঘটনার পর ৫ অগাস্ট রাতে ‘অধিক মুনাফার আশায় ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে বেপরোয়া লঞ্চ চালিয়ে অবহেলাজনিত নরহত্যার’ অপরাধে লঞ্চ মালিক ও তার ছেলেসহ ছয় জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
পলাতক অন্য চার আসামিরা হল- লঞ্চের পুরনো মালিক (কাগজেপত্রে এখনও যিনি মালিক) মনিরুজ্জামান খোকন, সারেং (মাস্টার) গোলাম নবী, সুকানী (গ্রিজার) ছবদর হোসেন মোল্লা ও কাওড়াকান্দি ঘাটের ইজারাদার আব্দুল হাই শিকদার।