যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি দণ্ডে দণ্ডিত জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আপিলে উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে।
Published : 15 Apr 2014, 02:29 PM
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে এই শুনানি হয়।
পরে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান না রেখে বুধবার উভয়পক্ষের দুটি আবেদনের বিষয়ে আদেশের দিন রাখা হয়েছে।
এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা অভিযোগে স্বাধীনতার পর দায়ের হওয়া মামলার দালাল আইনে গঠিত স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের নথি তলবের আবেদন করে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ ওই মামলার রেজিস্ট্রার খাতা তলবের আবেদন করে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান। আসামিপক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাহজাহান।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলে, “আমরা আপনাদেরকে আর কত সময় দিব, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আপনারা শুনানি করেছেন। এখন পুনরাবৃত্তি করছেন।”
“এই কোর্ট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল নয়, এটা আপিল বিভাগ। আমরা এখানে কেবল ট্রাইব্যুনালের মামলার শুনানি করি না।”
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এ নেতাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়ার দুটি অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড হয়।
আরো ছয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে আদালতে প্রমাণিত হলেও এর মধ্যেই ফাঁসির আদেশ হওয়ায় সেগুলোতে কোনো দণ্ড দেয়নি আদালত।
এই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ মার্চ আপিল করেন সাঈদী। অন্যদিকে প্রমাণিত হলেও সাজা না হওয়া ছয় অভিযোগে এই জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। প্রথমে আসামিপক্ষ রায়, সাক্ষ্য ও জেরা উপস্থাপনের পর গত ২৯ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান।
আসামিপক্ষের পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছে রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনাল যে ১২টি অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দিয়েছে, সেগুলোতেও আপিলে ‘পূর্ণ ন্যায়বিচার’ চায় রাষ্ট্রপক্ষ।
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে। পলাতক থাকায় তিনি এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি।
৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তবে আপিল শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট গত ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়। ১২ ডিসেম্বর ওই দণ্ড কার্যকর হয়।
তৃতীয় রায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এরপর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আরো ছয়টি রায় দেয়া হয়।