তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার বাসায় হামলার পর ‘নিরাপদ’ এলাকায় একটি বাড়ি চেয়েছেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী তুরিন আফরোজ।
Published : 26 Dec 2013, 09:31 PM
বুধবার গভীর রাতে তুরিন আফরোজের উত্তরার বাসায় হামলার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটি বাড়ি চেয়েছেন তিনি।
তুরিন আফরোজ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের মর্যাদায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর নিযুক্ত হন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপককে গত ২০ ফেব্রুয়ারি এই নিয়োগ দেয়া হয়।
গত ২৭ অক্টোবর তুরিন আফরোজের বাড়িতে হাতবোমা হামলায় জড়িতদের সনাক্ত না করার মধ্যে বুধবার রাতে তার বাড়িতে চড়াও হয় একদল ব্যক্তি।
ঘটনা প্রসঙ্গে তুরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাতে ১০টার দিকে একটি সাদা গাড়িতে কিছু লোকজন আমাদের বাসার সামনে আসে। গাড়ি থেকে একজন নেমে আমাদের বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকতে চায়।
“দারোয়ান তাদেরকে ঢুকতে না দিলে তারা ফিরে যায়। তবে রাত ১টার দিকে ৩/৪জন একত্রে এসে দারোয়ানদের ব্যাপক মারধর করে।”
ওই যুবকরা ভেতরে ঢুকে ফ্ল্যাটের দরজায়ও লাথি মারতে থাকে বলে জানান তুরিন।
“তবে আমি দরজা খুলিনি। পরে থানায় ফোন করার পর পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ব্যবস্থা নেয়।”
এই ঘটনার পর পুলিশ ও আনসারের পাহারা বসলেও মেয়েকে নিয়ে নিজের ওই বাড়িতে থাকতে অনিরাপদ বোধ করছেন এই আইনজীবী।
“আমরা মনে হচ্ছে, এখানে আর থাকা উচিত নয়। নিরাপদ কোনো একটি এলাকায় চলে যেতে হবে। নিরাপদে কিছুদিন কাজ করে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করতে হবে।”
তুরিন আফরোজের আবেদন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা শফিক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তুরিন আমাকে একটি বাড়ির কথা বলেছে। তবে এটা তো একটি জটিল বিষয়।
“স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরাপত্তা দেয়, পূর্ত মন্ত্রণালয় বাড়ি বরাদ্দ দেয়। আমি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়েছি।”
২০১০ সাল থেকে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ‘আইন বিষয়ক সম্পাদক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তুরিন।
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দেয়ার পর সে সময়ে বিদ্যমান আইনে প্রসিকিউশনের আপিল সম্ভব নয় বলে প্রথম চিহ্নিত করেছিলেন তিনি। পরে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় আইন সংশোধন করে আপিলের সমান সুযোগ তৈরি করা হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসাবে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
এই মামলার প্রসিকিউটর হিসাবে রয়েছেন তুরিন আফরোজ। ইতিমধ্যে রায় ঘোষিত হওয়া মামলাগুলোতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটারের বাড়িতে হামলার বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, তুরিনের বাড়ির পঞ্চম তলার ভাড়াটেই এই কাণ্ড করেছেন।
“রাত ১০টার দিকে ভাড়াটিয়া আব্দুর রহমান সাজুর ভাতিজা ও মা তার বাড়িতে আসেন। এ সময় বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী ফারুক হোসেন তাদের চেনেন না বলে বাড়িতে ঢুকতে দেননি।”
“এ ঘটনায় উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সাজুর স্ত্রী নেমে এসে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। রাতে মদ্যপ অবস্থায় সাজু বাসায় ফিরলে তার মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে শুনে ফারুক হোসেনকে মারধর করেন।”
এ ঘটনায় দারোয়ান ফারুক ভোররাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের অভিযোগ করলে সাজুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
হামলাকারীরা কারা বলে সন্দেহ করছেন- জানতে চাইলে তুরিন বলেন, সাজুরা অনেকদিন ধরেই তাদের বাড়িতে রয়েছেন।
“তাদের জামায়াত কানেকশন রয়েছে বলে পরে জানতে পেরেছি,” বলেন তুরিন।