তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে।
Published : 12 Aug 2013, 03:11 PM
হেফাজতবিরোধী মতিঝিল অভিযান নিয়ে বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে গ্রেপ্তারের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন মন্ত্রী।
চারদলীয় জোট সরকার আমলের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিল জামায়াতঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
গত ৫ মের মতিঝিল অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছে বলে ডানঘেঁষা এই মানবাধিকার সংগঠনটির প্রতিবেদনে যে দাবি করা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে তা নাকচ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ওই প্রতিবেদন সম্পূর্ণ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও উস্কানিমূলক’। ওই প্রতিবেদনে সংগঠনটি নিহতের যে সংখ্যা উল্লেখ করেছে, তাও ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য’।
“অধিকার রাজনৈতিক দল বা রাজনীতি নিরপেক্ষ কোনো সংস্থা নয়। অধিকার নিরপেক্ষতার মুখোশে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের রাজনৈতিক অঙ্গে পরিণত হয়েছে।”
পিআইডির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে অধিকারের প্রতিবেদনকে ‘কাঁচা এবং অপ্রতুল’ বলেও উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “অধিকারের প্রতিবেদনে ৬১ জন নিহত হওয়ার কথা বলায় হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও হেফাজতের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার অবতারণা হয়েছে।”
অবশ্য ওই প্রতিবেদন এবং প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ‘নিহতদের’ নামের তালিকা চাওয়ার সঙ্গে আদিলকে গ্রেপ্তারের কোনো সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করেন ইনু।
তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তি আইন লঙ্ঘন এবং ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে রাজনৈতিক উস্কানি দিয়ে শান্তি-শৃংখলা ভঙ্গের চেষ্টা’ চালানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার রাতে অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান শুভ্রকে গ্রেপ্তার করার পর তথ্য বিকৃতি এবং রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাকিম আদালত রোববার তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায়।
তবে সোমবার রিমান্ড স্থগিত করে কারাফটকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় হাই কোর্ট।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তথ্যমন্ত্রী অধিকারের প্রতিবেদন এবং এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের কথা বলেন। এরপর তিনি ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে চিঠি দিয়ে তাদের প্রতিবেদন ও প্রতিবেদনে দাবি করা নিহত ৬১ জনের নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা চায় সরকার। কিন্তু ১৭ জুলাই ফিরতি চিঠিতে নাসির উদ্দিন ‘সরকারের ইচ্ছার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে’ সাক্ষী ও ভিকটিমদের নিরাপত্তার কথা তুলে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
“এটা তথ্য অধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তথ্য না দিয়ে অধিকার দেশের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। কারণ তথ্য অধিকার আইনে সকল সংস্থা তথ্য দিতে বাধ্য।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, অধিকারের প্রতিবেদনে মাত্র দুইজন নিহত ও চারজন আহত ব্যক্তির নাম ঠিকানাসহ তাদের আত্মীয় পরিজনের পরিচয় দিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আরও কয়েকজনের নাম ঠিকানাসহ তাদের সাক্ষাৎকারও এতে রয়েছে।
তারাই তাদের প্রতিবেদনে তিনজন পুলিশ ও দুইজন বিজিবি সদস্যসহ নিহতের সংখ্যা মোট ১৬ জন বলে উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনের কোথাও কোনো ব্যক্তি বা তার আত্মীয়-পরিজন বা কোনো ভিকটিম বা সাক্ষীর বিরুদ্ধে সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে হয়রানি বা নিপীড়নের বা তাদের মানবাধিকার লংঘনের একটি ঘটনাও উল্লেখ করা হয়নি বলে ইনু জানান।
“সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান এবং ৫ মে দিনের বেলায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম ও হেফাজতে ইসলাম নামধারী জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত প্রচারাভিযান চালাচ্ছে, তারই রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও কৌশলের অংশ হিসেবে ‘অধিকার’ তাদের এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, উস্কানিমূলক, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মনগড়া, কাল্পনিক, একপেশে অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, অধিকারসহ যারাই শাপলা চত্বরের অভিযান নিয়ে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ কথা বলছেন, তাদের প্রতি নিহতদের নাম ও ঠিকানা প্রকাশ করার আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী।
আদিলের গ্রেপ্তারে বিদেশি কয়েকটি সংস্থার উদ্বেগ প্রকাশ এবং তার মুক্তি দাবি করায় মন্ত্রী বলেন, “আমরা বিদেশি সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে বলতে চাই, এই গ্রেপ্তার মানবাধিকার লংঘনের কোনো ঘটনা নয়। তার ব্যক্তিগত মানবাধিকার বাংলাদেশের আইন এবং সরকার, প্রশাসন, আদালত দ্বারা সুরক্ষিত। তাকে দেশের প্রচলিত আইনে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
বিদেশি সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশে এসে সরেজমিনে মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখারও আহ্বান জানান তিনি।