হল-মার্ক কেলেঙ্কারি তদন্তে সাতটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
Published : 04 Aug 2013, 11:02 PM
এই কারণে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় ঋণ জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে গঠিত দুদকের তদন্ত দলের প্রধান মীর জয়নুল আবেদিন শিবলী।
তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এবি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক তথ্য দিচ্ছে না।
“সোনালী ব্যাংক তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র আমাদের দিচ্ছে। কিন্তু এই ব্যাংকগুলো (সাতটি) কাগজপত্র দিতে গড়িমসি করছে।”
মীর শিবলী বলেন, “কোনো গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য নিতে কোর্টের আদেশ লাগে। কিন্তু ব্যাংকের নিজস্ব রেকর্ডপত্রের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন নেই। তারা আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে।”
হল-মার্ক গ্রুপের ২২টি ব্যাংকের ২৬০টি হিসাব জব্দের নির্দেশ রয়েছে আদালতের।
২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলাসহ একাধিক শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা সরানোর অভিযোগ উঠেছে হল-মার্ক গ্রুপ এবং এর সহযোগী ছয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে হল-মার্ক একাই তুলেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা।
গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হলে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার প্রেক্ষাপটে গত বছরের অগাস্টে অনুসন্ধান শুরু দুদক।
অনুসন্ধান কার্যক্রমকে দুই ভাগে ভাগ করে দুদক; ফান্ডেড ও নন ফান্ডেড। সোনালী ব্যাংক থেকে সরাসরি তোলা অর্থকে ফান্ডেড এবং সোনালী ব্যাংকের কাগজপত্র দেখিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে তোলা অর্থকে নন ফান্ডেড অংশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ফান্ডেড অংশের অনুসন্ধান শেষে গত বছরের ৪ অক্টোবর হল-মার্ক গ্রুপের পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম এবং মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদসহ সোনালী ব্যাংকের ২০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় ১১টি মামলা করে দুদক।
তানভীর, জেসমিন এবং তানভীরের ভায়রা তুষার গ্রেপ্তারও হন। এর মধ্যে জেসমিন প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকা দেয়ার শর্তে রোববার জামিন পান।
দুদকের তদন্ত দলের প্রধান মীর শিবলী বলেন, হল-মার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংকের কাগজপত্র দেখিয়ে মোট ২৭টি ব্যাংক থেকে অর্থ তুলেছে।
এগুলোর মধ্যে ২০টি ব্যাংক দুদকের চিঠির জবাবে তাদের ওই সময়ের(২০১০-২০১২ এর মার্চ পর্যন্ত) নথিপত্র দিয়েছে।
মীর শিবলী বলেন, “একটি ব্যাংকের রেকর্ডপত্র হাতে নিলে দেখা যায়, ওই ব্যাংকের সঙ্গে আরো ৫/৬টি ব্যাংকের লেয়ারিং (আন্তঃব্যাংক লেনদেন) আছে। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যাংকগুলোর তথ্যও আমাদের লাগে।”
ব্যাংকের তথ্য পেতে আদালতে যাচ্ছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তাহলে তো প্রতিটি ব্যাংকের রেকর্ড পরীক্ষা করার জন্য একটি করে কোর্ট অর্ডার লাগবে। আর কোর্টে গেলেও তো তাৎক্ষণিকভাবে অনুমতি পাওয়া যায় না, সেটাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।”
তবে তদন্ত দলের প্রধান মীর শিবলী ততটা আশাবাদী নন।
“ব্যাংকগুলো যথাসময়ে রেকর্ডপত্র সরবরাহ না করায় তদন্ত কাজ তো বিলম্বিত হচ্ছেই, এমনকি আমরা মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ইনফরমেশনও পাচ্ছি না।”
“তাই কবে নাগাদ তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি” বলেন তিনি।