সকাল ১১টায় শুরু হওয়া এই সংষর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকে ও বিজয়নগরেও।
পুলিশ হেফাজতের কর্মীদের হটাতে শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়েছে বলে প্রত্যক্ষর্শীরা জানিয়েছেন।
হেফাজত কর্মীরা পল্টনের বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয় মুক্তি ভবনের নিচে থাকা পুরানো বইয়ের দোকানগুলোয় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ভবনের পাঁচ তলা পর্যন্ত সামনের কাচগুলোও ভেঙে ফেলেছে তারা।
পল্টন মোড় থেকে পুলিশ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে অবস্থান নেয়া হেফাজতের কর্মীদের দিকে টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়া হলেও হটছে না তারা।
বিজয়নগর থেকেও পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হচ্ছে। রাবার বুলেট ছুড়ে যার জবাব দিচ্ছে পুলিশ। পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকেও বিজয়নগর ও দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে বাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়া হচ্ছে।
হেফাজতকর্মীরা ট্রাফিক পুলিশের পূর্ব বিজয়নগর কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দিলে অগ্নিদগ্ধ হন কনস্টেবল পিয়ারুল ইসলাম (৩৫) । তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
হেফাজতের স্বেচ্ছাসেবকরা দৈনিক বাংলা মোড় থেকে কোনো মিছিল পল্টনের দিকে যেতে দিচ্ছে না। পল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোরা হেফাজতের কর্মী নয় বলে এক স্বেচ্ছাসেবক দাবি করেন।
সংঘর্ষের সূচনা সকাল ১১টায় যখন মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের জন্য আগেভাগে জড়ো হওয়া হেফাজতকর্মীদের একাংশ পুলিশের বাধা এড়িয়ে পল্টন মোড় পর্যন্ত চলে যায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদকরা জানান, তখন পুলিশ প্রেসক্লাব থেকে টিয়ার গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়।
সাড়ে ১২টার দিকে দৈনিক বাংলা মোড়ের ব্যারিকেড সরিয়ে হেফাজতকর্মীরা পল্টন মোড় পর্যন্ত এসে পড়ে। তখন পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। হেফাজতকর্মীরা পাল্টা ইট-পাটকেল ছুড়ে।
পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার পর হেফাজতকর্মীরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে পুলিশের দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
হেফাজতকর্মীরা আবার বায়তুল মোকাররমের কাছে ফিরে এলে পুলিশ তৃতীয় দফায় সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের হটিয়ে দেয়।
অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশার আসাদুজ্জামান জানান, হেফাজতকর্মীরা দৈনিক বাংলার ব্যারিকেড ভেঙে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট ও পল্টন পর্যন্ত চলে এলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের হটিয়ে দেয়।
এরপর হেফাজতকর্মীরা পিছু হটে দৈনিক বাংলার দিক থেকে পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে থাকে। বিজয়নগরের দিক থেকেও পল্টন মোড়ের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ছে হেফাজতকর্মীরা। জবাবে পুলিশ দুই দিকেই একের পর এক রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ছে।
অবরোধ করে ঢাকা 'বিচ্ছিন্ন' করে রাখা হেফাজতে ইসলাম দুপুরে ঢাকার কেন্দ্রস্থল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি পায়।
রোববার ভোর থেকে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি রাখার পর শাপলা চত্বরে দুপুর তিনটায় সমাবেশ শুরু করার অনুমতি পায় সংগঠনটি।
ব্লগারদের শাস্তি ও নারীনীতি বাতিলসহ ‘বিতর্কিত’ ১৩ দফা দাবিতে সরকারকে চূড়ান্ত চাপ দিতে হেফাজত ইসলামীর অবরোধে সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজধানী।
ভোরে ফজরের নামাজের পরপরই ১৩ দফা দাবিতে হেফাজতকর্মীরা টঙ্গী ব্রিজ, যাত্রাবাড়ির কাজলা, ডেমরা, বাবুবাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা ব্রিজ, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের আমিনবাজার ও গাবতলীতে অবস্থান নেয়। তাদের হেফাজতকর্মীদের ঢাকার কেন্দ্রে আসা ঠেকাতে বিভিন্ন স্থান ব্যারিকেডও দেয় পুলিশ। কিন্তু সমাবেশের অনুমতি দেয়ার পর ঢাকার প্রবেশপথগুলো থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে নেয় পুলিশ। তখন অবরোধকারীরা মিছিল নিয়ে মতিঝিলের দিতে আসতে থাকে।