আশিক হোসেন
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক
ঢাকা, মার্চ ০৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলার আসামিরা ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করলেও তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথেষ্ট উদ্যোগী ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ ও প্রশাসন বলছে, তাদের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই।
জুবায়েরের বড় ভাই এবং সিলেটের লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলায় নতুন করে কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। ঘটনার এতো দিন পরেও পুলিশ বলছে আসামিরা পলাতক। বোঝাই যাচ্ছে তাদের চেষ্টার অভাব রয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ গত ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উপাচার্য মদদপুষ্ট’ বলে পরিচিত ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় আহত হন। পরদিন ঢাকার ইউনাইটেড হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় ‘বিতর্কিত’ ভূমিকার জন্য তুমুল সমালোচনার মুখে পরতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীরকে। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন, প্রক্টর আরজু মিয়া এবং প্রক্টরিয়াল কমিটির অন্য সদস্যরা পদত্যাগ করেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ ছাত্রলীগ কর্মীর ছাত্রত্ব বাতিল এবং অন্য ৬ জনকে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামুন বলেন, “ঘটনার শুরু থেকে আমরা কোনোভাবেই প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাইনি। কিছুদিন আগে জুবায়েরের এক বন্ধু আমাকে ফোন করে জানিয়েছে, কামরুজ্জামান সোহাগ নামে একজন আসামিকে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে দেখা গেছে।”
জুবায়ের হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকায় দর্শন বিভাগ, ৩৭তম ব্যাচের ছাত্র সোহাগকেও দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
মামুন বলেন, “আমরা আশঙ্কা করছি, পুলিশ ও প্রশাসনের অবহেলার কারণে আসামিরা পার পেয়ে যেতে পারে। আসামিদের গ্রেপ্তার না হওয়া এবং তাদের ক্যাম্পাসে অবস্থানের ঘটনা আমাদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।”
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি নাসির উদ্দিন প্রিন্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জুবায়ের হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। রাষ্ট্রীয় আইনে হত্যাকারীদের বিচারের ব্যাপারে প্রশাসনের যে চাপ থাকা উচিত ছিলো তা মনে হচ্ছে অনেকটাই শিথিল।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের আহবায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, “হত্যা মামলায় নতুন কোনো গ্রেপ্তার নেই। এদের অনেকেই প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন সব জেনেও চুপ। এ থেকেই প্রশাসনের ভূমিকা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।”
তিনি আরো বলেন, “এতো বড় ঘটনার পরেও ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলছে। কিছুদিন আগেও বঙ্গবন্ধু হলে একজন শিক্ষার্থীকে অস্ত্রের ভয় দেখানো হয়। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলে ওই শিক্ষার্থীকে মীমাংসা করে হলে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। সুতরাং প্রশাসন কতটুকু সহযোগিতা করতে পারে তা আমরা ভালোই বুঝতে পারছি।”
দর্শন বিভাগের শিক্ষক রায়হান রাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নিজে দেখেছি হত্যাকারীদের একজন ইশতিয়াক মাহবুব অরূপ নিয়মিত ফেসইবুক ব্যবহার করছে। হত্যাকারীদের ধরার উদ্দেশ্য থাকলে সহজেই তার অবস্থান জানা সম্ভব।”
জুবায়ের হত্যায় জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র এবং ছাত্রলীগ কর্মী অরূপের ছাত্রত্ব বাতিল করেছে প্রশাসন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে নিবন্ধক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “মামলার বিষয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। আমরা নিয়মিত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যদি মামলার কোনো আসামিকে ক্যাম্পাসে বা ক্যাম্পাসের বাইরে পাওয়া যায়, তাহলে আমরা অবশ্যই তাকে পুলিশে হস্তান্তর করব। যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।”
জুবায়ের হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক শাহেন শাহ পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ সাধ্যের মধ্যে সব কিছুই করার চেষ্টা করছে। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো ত্র“টি নেই। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তারে একটু সময় লাগছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএইচএ/এসইউ/জেকে/১৮১০ ঘ.