নরসিংদী: ইভিএমে ভোট, এসএমএসে ফল প্রেরণ

নরসিংদী পৌর মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে এসএমএস পদ্ধতি ব্যবহার করে সোয়া এক ঘণ্টায় বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2012, 12:12 PM
Updated : 19 Jan 2012, 12:12 PM
মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
নরসিংদী, জানুয়ারি ২০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- নরসিংদী পৌর মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে এসএমএস পদ্ধতি ব্যবহার করে সোয়া এক ঘণ্টায় বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবারের এ নির্বাচনে ৬৭ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ভোট শেষ হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভোটের ফল এসএমএসে আসতে শুরু করে। ৩১ কেন্দ্রের ফল আসতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মু. আবদুল অদুদ ভোট শেষেও এক ঘণ্টা পর প্রথম বেসরকারি ফল ঘোষণা শুরু করেন।
তিনি বলেন, “এসএমএস পদ্ধতিতে সংগৃহীত ভুল হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
ভোটের তিন ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৭টায় সব কেন্দ্রের হাতে লেখা ফল কার্যালয়ে আসে বলে জানান সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। এসব কেন্দ্রের একীভূত চূড়ান্ত ফলে জয়ীকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি উদ্ভাতি স্বয়ংক্রিয় এসএমএসে ফল দেওয়ার পদ্ধতি প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয় নরসিংদীতে।
আইআইসিটি পরিচালক অধ্যাপক লুৎফুল কবীর সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাত্র সোয়া ঘণ্টায় ৩১ কেন্দ্রের নির্ভুল ফল দেওয়ার মধ্যে প্রমাণ হয়েছে এ পদ্ধতি সফল। ইসির ইতিহাসে এতো স্বল্প সময়ে ফল ঘোষণা একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এ পদ্ধতি আগামীতে ব্যবহার হবে কি না তা ইসি ভেবে দেখবে।”
এসএমএসে ফল ঘোষণায় কিছু জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে- কোনো কেন্দ্রে এজেন্টদের উপস্থিতিতে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে জোর করে ভুল ফল পাঠানো কিংবা যে মোবাইলে ফল পাঠানো হচ্ছে তাদের এ ফল অগ্রিম জানার অবকাশ থেকে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইআইসিটি পরিচালক বলেন, “সব ধরনের হুমকি বা নিরাপত্তার বিসয়টি আইনীভাবে কীভাবে রোধ করা যায় তা ইসি ভেবে দেখবে। এজন্যে শাস্তির বিধানও থাকতে পারে। তবে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
মাত্র সোয়া ঘণ্টায় এসএমএসে ফল পাওয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা আইআইসিটি পরিচালককে সাধুবাদ জানান বলে উল্লেখ করেন লুৎফুল কবীর।
স্বল্প সময়ে ফল ঘোষণাকে ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ের (ইভিএম) যাত্রার পথে আরো এক দাপ এগিয়ে যাওয়া বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমকে বলেন, “ইভিএমের আরেকটি সাফল্য নরসিংদী। ইভিএমে দ্রুত ভোটগ্রহণ হয় বলে নির্ভুল গণনার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে এ ফল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে এসএমএসে ফল সংগ্রহের বিষয়টি এখন ইসি বিবেচনা করবে।”
ইভিএমের একের পর এক সাফল্যে বিরোধীতাকারীরাও আগামীতে এতে সম্মত হবে বলে মন্তব্য করেন এ নির্বাচন কমিশনার।
নির্বাচনী এলাকায় ইসির প্রতিনিধি হয়ে আসা ইসির উপ-সচিব ও ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পর দ্রুত ফল পাওয়ায় ইভিএম ও এসএমএম পদ্ধতির এক যুগান্তকারী সমন্বয় নরসিংদীতে হয়েছে। এ পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার হওয়ায় ইসি আগামীতে তা ভেবে দেখতেও পারে।
ফল সংগ্রহ পদ্ধতি
লুৎফুল কবীর জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে থাকে বিশেষ নম্বরের সফটওয়্যারের মডেম। প্রতি ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও একজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে (ইসির কাছে নিবন্ধিত) মোবাইল নম্বর থাকে।
নির্ধারিত নম্বরে প্রথম দফায় সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা একটি এসএমএসে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ফলাফল পাঠান নির্বাচনী এলাকার কেন্দ্রীয় সার্ভারের তথ্যভাণ্ডারে। দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার থেকে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে ফিরতি একটি এসএমএস পাঠিয়ে ফল সঠিক কি না যাচাই করা হয়। তৃতীয় দফায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এসএমএস দিয়ে সত্যতা নিশ্চিত করলে ফলাফল তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করা হয়।
ফল পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে আসার পর বিশেষ সফটওয়্যার থাকায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগফল পাওয়া যায়। পরে কেন্দ্র থেকে কর্মকর্তাদের হাতে করে নিয়ে আসা ফল মিলিয়ে দেখা হয়।
নরসিংসদী মেয়র উপ-নির্বাচনে কামরুল কাপ পিরিচ প্রতীকে ৩৫ হাজার ৫৬৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকে মোন্তাজ পান ১৩ হাজার ৮১৩ ভোট।
এর আগে ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে ৩১ হাজার ৭০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন লোকমান হোসেন।
গত ১ নভেম্বর লোকমান মারা যাওয়ার পর এ পৌরসভায় বৃহস্পতিবার উপ-নির্বাচন হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/পিডি/০০১২ ঘ.