ঢাকা, জানুয়ারি ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জুবায়ের আহমেদ হত্যার ঘটনায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আরজু মিয়া।
সোমবার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনিক ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমি পদত্যাগ করেছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ কতিপয় দুর্বৃত্ত কর্তৃক নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে অধ্যাপক ড. মো. আরজু মিয়া প্রক্টরের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।”
প্রক্টরের পদ ছাড়লেও সিন্ডিকেট ও সিনেটের সদস্য পদ, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রধ্যক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকান পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে বহাল রয়েছেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আরজু মিয়া।
গত ৮ জানুয়ারি জুবায়েরকে কুপিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের একদল কর্মী, যারা ক্যাম্পাসে উপাচার্যের সমর্থনপুষ্ট হিসেবে পরিচিতি। পরদিন হাসপাতালে মারা যান জুবায়ের।
এরপর থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এবং আট দফা দবিতে শিক্ষকরা ‘সচেতন শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। আরজু মিয়াসহ পুরো প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ ছিল তাদের অন্যতম দাবি।
একটি দাবি পূরণ হলেও অন্যগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
দর্শন বিভাগের শিক্ষক রায়হান রাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দাবির আংশিক পূরণ হয়েছে। তবে আমাদের মূল দাবি- সব সন্ত্রাসীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ এবং প্রক্টরিয়াল বডির অন্য সদস্যদের পদত্যাগ এখনো অর্জন হয়নি। সেই সঙ্গে আমরা নতুন একটি দাবি জনিয়েছি- প্রশাসনের পক্ষ থেকে জুবায়েরের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যাবস্থা করা। এসব দাবি পূরণের লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন চলবে।”
প্রক্টরের পদত্যাগের পরপরই তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সব দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজ আল আসাদ বলেন, “আমরা সকালে ৪ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীরের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। বাকি তিনটি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিকেলে সিন্ডিকেট সভার পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
প্রক্টরের পদত্যাগ বিষয়ে প্রশাসনের বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বলতে চাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।”
জুবায়ের হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় এ পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া তিন ছাত্রকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আরজু মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পান ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে। জুবায়ের হত্যার ঘটনায় উত্তপ্ত ক্যাম্পাসে গত ১৩ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বৈঠকের এক পর্যায়ে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এমএ মামুনকে লাঞ্ছিত করেন এই অধ্যাপক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএইচএ/জেকে/১২৫০ ঘ.