রেলওয়ে বনাম রনি: দুদক কী করছে, জানতে চায় হাই কোর্ট

রেলওয়ের যে অব্যবস্থাপনা বন্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি আন্দোলন করে আসছেন, সেই অনিয়ম বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2022, 08:53 AM
Updated : 20 July 2022, 09:15 AM

দুই সপ্তাহ ধরে কমলাপুর স্টেশনে রনির অবস্থান কর্মসূচি পালনের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসায় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দুদকের আইনজীবীকে এ নির্দেশ দেয়।

ওই শিক্ষার্থী রেলওয়ের অব্যস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিকার চাইলে উচ্চ আদালত বিষয়টি দেখবে বলেও হাই কোর্ট বেঞ্চ জানিয়েছে।

দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান পরে সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- একজন শিক্ষার্থী হাতকড়া পরা অবস্থায় রেলের সিন্ডিকেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, এটা দুদক জানে কিনা। তখন আমি ওই সংবাদ প্রতিবেদন পড়েছি। এরপর আদালত বলেছে, যদি জেনে থাকি, তাহলে দুদকের কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা, থাকলে কোর্টে জানাতে বলেছে।”

আদালতে এই নির্দেশনার বিষয়টি দুদককে অবহিত করেছেন জানিয়ে খুরশীদ আলম খান বলেন, “অফিস (দুদক) এই বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত আমাকে জানালে আমি আদালতকে জানিয়ে দেব।"

রনির আন্দোলনের বিষয়ে আদালতে বক্তব্য তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, “সেই শিক্ষার্থী যদি হাই কোর্টে আসতে রাজি হয়, তাহলে হাই কোর্টে বিষয়টি দেখবে বলেছে।”

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। মঙ্গলবার পদযাত্রা করে রেলের মহাপরিচালককে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তিনি।

দাবি মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি রেল কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন এই শিক্ষার্থী। তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অংশ।

রনির ভাষ্য, ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করেন তিনি। তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হলেও ট্রেনের কোনো আসন তিনি পাননি।

পরে কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়৷

কিন্তু ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রনির।

তিনি বলছেন, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো জবাব বা শুনানির জন্য ডাক আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে ৭ জুলাই থেকে তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন।

পরে পুলিশ বাধা দিলে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী তার সঙ্গে কর্মসূচিতে অংশ নেন। তবে রনি একাই এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এক পর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে রনির দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, জামালপুর ও নোয়াখালীতেও রনির দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে রেল স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা ও বিভিন্ন সংগঠন।

রাজশাহী যাওয়ার টিকেট না পেয়ে একদল শিক্ষার্থী বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনে রেললাইন অবরোধ করলে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ঢাকা থেকে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়।