সাড়ে তিন ঘণ্টা পর অবরোধ তুললো ছাত্ররা, ঢাকা থেকে ট্রেন চলাচল শুরু

রাজশাহী যাওয়ার টিকেট না পেয়ে রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনে রেললাইন অবরোধ করে রাখা শিক্ষার্থীরা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিয়ে সরে গেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2022, 07:12 AM
Updated : 20 July 2022, 01:36 PM

ঢাকা রেলওলে থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, বুধবার বেলা ১২টা ২০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে লাইন ছেড়ে চলে গেলে চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশন ছেড়ে যায়, অন্যান্য রুটের ট্রেন চলাচলও শুরু হয়।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা নীলসাগর এক্সপ্রেস আটকে দিয়ে রেলপথে অবস্থান নিলে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া দেশের সব রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীদের একজন জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য টিকেট সংগ্রহে বহু শিক্ষার্থী সকালে বিমানবন্দর স্টেশনে জড়ো হয়। কিন্তু কয়েকজনকে টিকেট দেওয়ার পর কাউন্টার থেকে বলা হয় ‘টিকেট নাই’।

অনলাইনে বা কাউন্টারে কোথাও টিকেট না পেয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করে। তাদের অবরোধের কারণে কমলাপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা নীলসাগর এক্সপ্রেস বিমানবন্দর স্টেশনে আটকে যায়। এ সময় টিকেট কাউন্টারে ভাঙচুরও করা হয়।

আগামী সপ্তাহে পরপর তিন দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২৫ জুলাই 'সি' (বিজ্ঞান) ইউনিটের, ২৬ জুলাই 'এ' (মানবিক) ইউনিটের এবং ২৭ জুলাই 'বি' (বাণিজ্য) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে। এ কারণে ২৪ জুলাইয়ের টিকিট পাওয়ার চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে ২৪ জুলাই রোববার রাজশাহীর ট্রেন সিল্কসিটি ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ। সে কারণে টিকেটের চাপ পড়েছে রাজশাহীর আরেক ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেসের ‍ওপর।  

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সাফওয়ান ইবনে সাইফ বলেন, তারা যে মেসে থাকেন, সেখানকার চার বন্ধু মিলে সকালে চারটি ফোনে ২৪ জুলাইয়ের পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটতে বসেন।

সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রির জন্য অপশন খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সহজের সিস্টেমে ঢুকে টিকেট সিলেক্ট করেন। কিন্তু পরের ধাপ পেমেন্ট অপশনে আর যেতে পারেননি। ‘ইউ আর ভ্যালুয়েবল টু আজ’- এই বার্তা আসে। পরে তারা আর সহজের সিস্টেমেও ঢুকতে পারেননি।

সাফওয়ান বলেন, অনলাইনে টিকেট কাটতে না পেরে তিনি এবং তার বন্ধু রাদ হোসেন স্টেশনে এসে দেখেন আরও অনেক শিক্ষার্থী টিকেটের জন্য লাইন দিয়ে আছেন। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়, টিকেট শেষ।

এরপর শিক্ষার্থীরা কাউন্টারের সামনে হইচই শুরু করে, ‘টিকিট চোর’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে কিছু শিক্ষার্থী রেললাইনের ওপর নেমে যায়।

এ সময় কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেন তারা আটকে দিলে কাউন্টারে দাঁড়ানো অন্য শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে রেল লাইন অবরোধ করে।

ফারহানে ইবতেসাম নামে আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, “অনলাইনে ঢুকতে না ঢুকতেই দেখাচ্ছে টিকেট শেষ। এদিকে কাউন্টারেও টিকেট নেই। শিক্ষার্থীরা কী করবে? ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে রেলের উচিৎ সাপ্তাহিক বন্ধের দিনের সিল্ক সিটি ট্রেনটা চালানো।”

এদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া রংপুর এক্সপ্রেস তেজগাঁও স্টেশনে আটকা পড়ে। আরও কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে ‘লাইন ক্লিয়ার’ হওয়ার অপেক্ষায় থাকে।

তিন ঘণ্টার বেশি সময় এই অচলাবস্থা চলার পর রেল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে পরিস্থিতি শান্ত হয় বলে ঢাকা রেলওলে থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান।

তিনি বলেন, “রেলের কর্মকর্তারা এসে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তারা যেন সুষ্ঠুভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে যেতে পারেন, কর্মকর্তারা সেই আশ্বাস দিয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষার জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ট্রেন চালানোর কথা বলেছেন। কর্মকর্তাদের আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়েছে।”

রেলে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা দূর করার দাবিতে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামেও একই দাবিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আন্দোলনে বসেছেন।