‘মাদারীপুর এত কাছে!’

ফেরিঘাটের লম্বা সিরিয়ালে এক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটেছে, ক্লান্তিকর যাত্রার দীর্ঘ সেই পথ যে এতটা ছোট হয়ে আসবে তা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না বাসচালক ইসমাইল হাওলাদার।

গোলাম মর্তুজা অন্তু জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2022, 10:56 AM
Updated : 26 June 2022, 07:05 PM

ঢাকার পোস্তগোলা সেতু এলাকায় চলতি পথে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মাদারীপুর যে এত কাছে, তা আগে কখনও মনে হয়নি।”

রোববার পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজা খুলে দিলে মাদারীপুর থেকে সার্বিক পরিবহনের বাস নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হন ইসমাইল।

পোস্তগোলা সেতু এলাকায় পৌঁছাতে তার সময় লেগেছে মাত্র দেড় ঘণ্টা; আগে যেখানে ফেরি পার হয়ে আসতে স্বাভাবিক সময়ে ৫/৬ ঘণ্টা লেগে যেত। আর ফেরিঘাটে দেরি হলে সময় লেগে যেত আরও বেশি।

ইসমাইল বলেন, “জীবনে প্রথম দেড় ঘণ্টায় মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসেছি। অথচ ফেরির সিরিয়াল আর লঞ্চঘাটেই জীবনটা পার হয়ে গেল।”

ব্যবসার কাজে ওই বাসের যাত্রী হাজী রফিকুল ইসলামকে প্রায়ই ঢাকার ইসলামপুরে যেতে হয়। ঢাকা থেকে তিনি মালামাল কিনে বাসে তুলে লঞ্চ ঘাটে পৌঁছাতেন, এরপর সেগুলো কাঁধে করে লঞ্চে তুলে পদ্মা পার হতেন। আর ওপারের ঘাটে পৌঁছে সেগুলো নামিয়ে ফের বাসে তুলতেন।

সারাজীবন এভাবে ঝক্কি-ঝামেলা পার করে আসা রফিকুল বলেন, “শেখ হাসিনা কী ম্যাজিক দেখাইল, জীবনের প্রথম দেড় ঘণ্টায় ঢাকা আইলাম।”

টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস নামের বাসটি সকাল ১০টায় পিরোজপুর থেকে ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশে। পদ্মা সেতুর উপরে এসে বাসটিকে থামতে দেখা যায়।

যাত্রীরা হুড়মুড় করে নেমেই পদ্মা সেতুর ছবি তুলতে ব্যস্ত হলেন। নিজেরাও ফ্রেমবন্দি হচ্ছিলেন। চালক কামাল আর তার সহযোগী রাজনও ছিলেন তাদের দলে।

বাসচালক কামাল বলেন, যাত্রীদের অনুরোধে সেতুর উপর বাস থামিয়েছেন। তবে আনন্দের সেই মুহূর্তটি তারাও মোবাইলে ধারণ করেছেন।

শনিবার দেশের সবথেকে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রোববার সকাল ৬টায় যানচলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই মানুষের।

প্রথম দিন সেতুর উপর বাস থামিয়ে যাত্রীরা ছবি তুলছিলেন। সব গাড়ি থেকেই জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ভিডিও করছিলেন যাত্রীরা। একদল তরুণ ট্রাকের উপর উচ্চ শব্দের স্পিকার নিয়ে গানবাজনা আর নাচানাচি করছিলেন।

তবে সকালে সেতুর টোল প্লাজার মাওয়া প্রান্তে যানজট দেখা যায়। বেলা বাড়লে যানজট কমে যায়। ১২টার দিকে সেতুর টোল প্লাজায় টোল দিতে এসেও মানুষের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।

টোল প্লাজার টিকিট হাতে নেওয়ার দৃশ্যটুকুও ক্যামেরায়বন্দি করতে থাকেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। এজন্য টোল দিতে বিলম্ব হলে কেউ বিরক্তিও প্রকাশ করছেন না। সবাই যেন প্রথম দিন উৎসবের আমজে ব্যস্ত।

টোল প্লাজা পার হতেই হঠাৎ হই হই চিৎকার। অঘটনের শঙ্কা নিয়ে তাকানোর পর দেখা গেল, এক ট্রাকভর্তি তরুণ সেতুতে উঠেই খুশিতে একসঙ্গে চিৎকার দিয়ে উঠেছেন। নাচানাচি করছেন ট্রাকের উপরে।

ঢাকা থেকে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস এমনকি বাস ভাড়া করে সেতু দেখতে এসেছেন হাজারো মানুষ। শত শত মোটরসাইকেল ও গাড়ি থামিয়ে মানুষ ছবি তুলে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। এর মাঝেই কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে যায়, তবে তাদের উচ্ছ্বাসে ছেদ পড়েনি সামান্যও।