ভোটের অমোচনীয় কালি এখন টিসিবির লাইনেও

জাল ভোট এড়াতে ভোট দিতে গেলে হাতের আঙুলে অমোচনীয় কালি লাগিয়ে দেওয়া হয়, ক্রেতার ভিড়ের কারণে এখন টিসিবির পণ্য কেনার লাইনেও তার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2022, 11:19 AM
Updated : 6 March 2022, 03:30 PM

রোববার বেলা ২টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের হাবুলের পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা যায় টিসিবির ট্রাকের সামনে নারী ও পুরুষের দুই লাইনই বেশ দীর্ঘ।

দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে পণ্য না পাওয়ার উৎকণ্ঠায় বিশৃঙ্খলাও দেখা দিচ্ছিল লাইনে। তখন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ক্রেতাদের হাতে অমোচনীয় কালিতে ক্রমিক নম্বর বসিয়ে দিচ্ছিলেন ডিলারের কর্মী।

সেখানে টিসিবির ডিলার স্বপ্না এন্টারপ্রাইজের ট্রাক দাঁড়িয়েছিল। এই ডিলার প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতা শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোক্তারাই ঝামেলা তৈরি করে ফেলছে। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কোনো পুলিশ রাখা হয়নি। আমরা সিরিয়াল লিখে দিয়েছিলাম।”

কিন্ত সেই সিরিয়ালও মানাতেও কষ্ট হচ্ছিল ডিলারের। আবার সিরিয়ালের বাইরেও একদল এসে তৃতীয় লাইন তৈরি করে ট্রাকের কাছাকাছি চলে আসলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এই পর্যায়ে বেচাকেনা বন্ধ করে দেন বিক্রেতা, আবার ব্যস্ত হন লাইন ঠিক রাখতে।

লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন নারী অভিযোগ করেন, রোদের মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে লাইনে থেকেও তারা ট্রাকের কাছাকাছি যেতে পারছেন না লাইনের সামনের দিকে জটলার জন্য।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন দিন দিনই দীর্ঘ হচ্ছে।

মাঝে আট দিন বিরতির পর রোববার আবার ভর্তুকি মূল্যের পণ্য নিয়ে টিসিবির ট্রাক ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থানে পণ্য বিক্রি করতে নামে।

হাবুলের পাড়ে ট্রাকের সামনে দাঁড়ানো রফিকুল ইসলাম বলেন, “বাজারে জিনিসপত্রের যেই দাম হয়েছে, তাতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে কিনতে পারলে অনেকগুলো টাকা বাঁচে।

“সেজন্যই সকাল থেকে কষ্ট করে অপেক্ষায় আছি কিছু পণ্য কেনার জন্য। কিন্তু যেভাবে সিরিয়াল ভেঙে অনেকে পণ্য নিয়ে নিচ্ছে, তাতে দুই ঘণ্টার অপেক্ষাটাই ব্যর্থ হবে বলে মনে হচ্ছে।”

দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে মিরপুর ১৪ নম্বরের ভাষানটেকে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনে ফিরছেন এই নারী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এখন বাজারে ২ কেজি চিনি ১৭০ টাকা, পাঁচ কেজি পেঁয়াজ ২৭৫ টাকা, প্রতি লিটার ১৮০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল ৩৬০ টাকা এবং দুই কেজি মসুর ডাল ২০০ টাকা।

টিসিবি প্রতি ক্রেতার জন্য ১১০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি চিনি, ৩০ টাকা কেজি দরে ২ থেকে সর্বোচ্চ ৫ কেজি পেঁয়াজ এবং ৬৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি মসুর ডাল বিক্রি করছে।

ফলে টিসিবি থেকে একবার কেনাকাটা করতে পারলে প্রায় ৪০০ টাকা সাশ্রয় করতে পারছেন ক্রেতারা।

সেকারণেই ভিড়ও বাড়ছে। তবে অনেকে শুধু তেল কিনতে চাইলেও তাদের অন্য পণ্য কিনতেও বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। সে কারণে কম টাকা নিয়ে আসা অনেককে কাঙ্ক্ষিত পণ্য কিনতে না পেরে ফিরতে হয়।

মিরপুর ১৪ নম্বরের ভাষানটেক এলাকায় রোববার টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ের সামনের সরু গলিতে টিসিবির যে ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি হচ্ছিল, সেই ট্রাকের ডিলারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আসে।

সকাল ১১টার দিকে ট্রাকটি থামার পরপরই পাশের মনিপুর স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের নিয়ে আসা অভিভাবকরাও দাঁড়িয়ে পড়েন পণ্যকেনার সারিতে। তবে রাস্তাটি সরু হওয়ায় সেখানে অস্বস্তিকর যানজটের সৃষ্টি হয়।

এখানে অপেক্ষমাণ শত শত মানুষকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখার জন্য ছিল না কোনো উদ্যোগ।

ফলে অনেকেই দুই ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য কিনতে পারেননি। আবার কেউ কেউ অপকৌশলনের আশ্রয় নিয়ে একাধিক বার পণ্য কিনেছেন বলে অভিযোগ করেন লাইনে দাঁড়ানো অনেকে।

দীর্ঘ সময় অপেক্ষা ও লাইনে দাঁড়িয়ে রোববার ঢাকার ভাষানটেক টিসিবির ট্রাক থেকে চিনি, ডাল ও তেল কিনে বেরিয়ে আসছেন একজন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

যে ডিলার এই ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছিলেন, অঙ্গনা ট্রেডার্সের কর্তাব্যক্তিদের কাছে এসব অভিযোগের বিষয়ে বার বার জানতে চেয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে এবার নতুন নতুন আবাসিক এলাকায় টিসিবির ট্রাক পণ্য নিয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা ভিড় কোথাও কম ছিল না। আবার স্থান নির্বাচন নিয়েও অভিযোগ ছিল।

এবিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির ঢাকার অঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিস প্রধান হুমায়ুন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার স্থান চিহ্নিতকরণসহ অন্যান্য কাজে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। ট্রাক দাঁড়ানোর স্থান নির্বাচন করা হয়েছে তাদের পছন্দের ভিত্তিতে।