ইমরান এবং তার আইনজীবীদের এ ধরনের আচরণকে ‘চরম অবমাননাকর’ উল্লেখ করে শিশু দুটিকে আপাতত তাদের মা জাপানি নাগরিক নাকানোর কাছে রাখতে দেওয়া হয়েছে।
দুই সন্তানের জিম্মা পেতে জাপান থেকে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশি স্বামীর সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে রয়েছেন নাকানো। কয়েক মাস ধরে চলছে তার এই লড়াই।
হাই কোর্ট পেরিয়ে আপিল বিভাগে মামলাটি এলে রোববার এক আদেশে আগামী বুধবার শিশু দুটিকে নিয়ে আসতে বলেছিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। সে পর্যন্ত শিশুদের মায়ের জিম্মায় রাখতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বাবার কাছ থেকে দুই সন্তানকে না পেয়ে সোমবার ইমরান শরীফের বিরুদ্ধে অদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে আবেদন করেন নাকানো এরিকো।
অন্যদিকে শিশুরা ‘মায়ের কাছে যেতে চায় না’ উল্লেখ করে আপিল বিভাগের রোববারে আদেশ সংশোধন চেয়ে আবেদন করেন ইমরান শরীফ।
এই পরিস্থিতিতে দুই শিশুকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাবা ইমরান শরীফ দুই শিশুকে নিয়ে হাজির হন। এরপর প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারকরা খাস কামরায় নিয়ে দুই শিশু, তাদের মা-বাবা এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীদের কথা শোনেন।
এরপর রোববারের আদেশ অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই শিশুকে মায়ের কাছে রাখারই সিদ্ধান্তই বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
সেই সঙ্গে আদালত বলে দিয়েছে, সে পর্যন্ত শিশুদের এই আদালতের এখতিয়ারের বাইরে কোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
আদালতে নাকানো এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম, সঙ্গে ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
শিশির মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ ও তার আইনজীবীরা যে কাজটা করেছেন, তা চরম অবমাননাকর এবং আদালত আশা করে রোববারের আদেশটি প্রতিপালন করা হবে।”
এরপর বিকাল ৫টায় দুই শিশুকে তাদের মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
২০০৮ সালে বিয়ে করে জাপানে স্বামী প্রকৌশলী ইমরানকে নিয়ে থাকা চিকিৎসক নাকানো এরিকো দাম্পত্য কলহের জেরে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি বিচ্ছেদের আবেদন করেন।
এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।
মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী।
তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলে বিচারক।
কিন্তু সমঝোতা না হওয়ায় কয়েক দফা শুনানির পর হাই কোর্ট সিদ্ধান্ত দেয়, ঢাকায় নিয়ে আসা দুই মেয়ে তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছেই থাকবে। তবে মা সন্তানদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন।
গত ২১ নভেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চের দেওয়া সে রায়ে বলা হয়, যেহেতু মা জাপানি নাগরিক এবং সেখানে বসবাস ও চাকরি করেন, সে কারণে তিনি তার সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশে এসে সন্তানদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন একান্তে সময় কাটাতে পারবেন।
হাই কোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদলতে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো।