ভাড়া দেওয়ার সময় শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে ২০ টাকার একটি নোট দেন তিনি। তাকে ফেরত দেওয়া হয় ৫ টাকা। ১০ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ওই শিক্ষার্থী বারবার বললেও বাসটির কনডাক্টর তা এড়িয়ে যান। ফলে বেশি ভাড়া দিয়েই নামতে হয় তাকে।
বিআরটিএর নতুন তালিকা অনুযায়ী, মিরপুর ১১ নম্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা। সেক্ষেত্রে এটুকু পথ যাতায়াত করতে একজন শিক্ষার্থীর ভাড়া হওয়ার কথা ৫ টাকা।
সানিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে যে কোনো বাসে ১০ টাকা দিয়ে আসতে পারতাম। এখন হাফ ভাড়া করার পরও টাকার পরিমাণটা বেড়ে গেল! আসলে নামে হাফ ভাড়া, তা মানা হচ্ছে না।”
ঢাকার শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকরের প্রথম দিন বুধবার এমন অভিযোগ এসেছে আরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
তারা বলছেন, অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার প্রতিশ্রুতি পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা দিলেও বাসগুলো ভাড়া নেওয়ার সময় তালিকা অনুযায়ী হাফ ভাড়া নেয়নি।
ডিজেলের দাম বাড়ার পর গণপরিবহনের ভাড়াও ২৭ শতাংশ বাড়ানো হলে বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
প্রথমে অরাজি হলেও শিক্ষার্থীদের চাপে বিআরটিএর দফায় দফায় বৈঠকেরপর মঙ্গলবার শর্ত সাপেক্ষে ঢাকায় বেসরকারি বাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভাড়া অর্ধেক নিতে রাজি হয় পরিবহন মালিক সমিতি।
বিআরটিএর নতুন তালিকা অনুযায়ী শেওড়াপাড়া থেকে ধানমণ্ডি পর্যন্ত ভাড়া ১১ টাকা। সে হিসেবে অর্ধেক ভাড়া সাড়ে ৫ টাকা। কিন্তু মিরপুর লিঙ্ক বাসে স্কুলশিক্ষার্থী চৈতির থেকে নেওয়া হয় ২০ টাকা।
জানতে চাইলে বাসটির কনডাক্টর মো. সিরাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাড়া আছে ২৫ টাকা। সেজন্য ২০ টাকা নিছি। নাহলে লস হয়ে যায়।”
“ঠিক আছে, পরে ৫ টাকা ফেরত দিয়ে দেব,” বললেও আর ওই শিক্ষার্থীকে টাকা ফেরত দেননি তিনি।
একই বাসে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ধানমণ্ডিগামী শিক্ষার্থীদের থেকে ভাড়া নেওয়া হয় ১৫ টাকা। অথচ তালিকা অনুযায়ী এ পথের ভাড়া ১৬ টাকা, তার অর্ধেক আট টাকা।
বাড়তি ভাড়া ফেরত চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহনকর্মীর বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। তবে টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাখাওয়াত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই পথে যেদিনই যাই একদিনও চার্ট অনুযায়ী ভাড়া নেয় না। বাড়তি ভাড়া নেয়। নর্মাল ভাড়া ২৫ টাকা হলেও শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের থেকে নিতে পারে ১২ টাকা। কিন্তু নিচ্ছে ১৫ টাকা।
“দিনে তিন টাকা তিন টাকা করে বাঁচলেও ৬ টাকা বাঁচে। আমরা তো শিক্ষার্থী, বুঝতে হবে।”
বুধবার সকালে বাসটি ১১ নম্বরে আসার পর চেকার এসে জানতে চান, শিক্ষার্থী আছে কি না? শিক্ষার্থীরা সাড়া দিলে তাদের পরিচয়পত্র দেখেন। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা যেখানেই নামেন তাদের থেকে নেওয়া হয় ১৫ টাকা।
হালিম ফাউন্ডেশন স্কুলের শিক্ষার্থী নাবিলা মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে এসে নামেন আগারগাঁওয়ে। তার কাছ থেকেও নেওয়া হয় ১৫ টাকা।
তবে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর থেকে নিউ মার্কেট এসে নামলেও সেই ১৫ টাকাই নেওয়া হচ্ছিল।
সরকারি তালিকা অনুযায়ী আগারগাঁও থেকে মহাখালী পর্যন্ত ভাড়া হয় ১০ টাকা।
শিক্ষার্থী হিসেবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক আলিফ পরিবহনের বাসে অর্ধেক ভাড়া হিসেবে ৫ টাকা দিলে তা না নিয়ে ১০ টাকা দাবি করেন কনডাক্টর।
তালিকা অনুযায়ী কেন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না- জানতে চাইলে সুজন নামে এই পরিবহনকর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার্ট অনুযায়ীই তো ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ভাড়া ২০ টাকা, স্টুডেন্ট ভাড়া ১০ টাকা।”
তালিকা অনুযায়ী সদরঘাট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ভাড়া ১২ টাকা। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নেহেরু রঞ্জন বিশ্বাসের থেকে ভাড়া নেওয়া হয় ১০ টাকা।
অধিকাংশ রুটের বাসে একই ধরনের অভিযোগ পেলেও ব্যতিক্রম দেখা যায় রবরব পরিবহেনর বাসে।
বিআরটিএর ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, মিরপুর ১ নম্বর থেকে সাড়ে ১১ পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা। শিক্ষার্থী পরিচয় দিলে এই প্রতিবেদকের থেকে ৫ টাকা ভাড়াই নেন পরিবহনকর্মী।