করোনাভাইরাস: এক সপ্তাহে রোগী কমেছে ২৫%

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে চলা কঠোর লকডাউনের মধ্যে রোগী শনাক্তের হার নিম্নমুখী।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2021, 05:55 PM
Updated : 24 April 2021, 06:02 PM

গত এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় শনাক্ত রোগী ২৫ শতাংশ কমেছে। এ সময় কমেছে নমুনা পরীক্ষাও। তবে মৃত্যু বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশজুড়ে চলা লকডাউনের কারণে সংক্রমণ কমেছে। সবাই লকডাউন মানলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও কমত।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢিলেঢালা লকডাউনের মধ্যেও সংক্রমণের এই নিম্নগতি, পুরোপুরি মেনে চললে অবস্থার আরও উন্নতি হতো।

“গত কয়েকদিন মোট শনাক্ত রোগী কমার পাশপাশি আক্রান্তের হারও কমেছে। এতে কোনো সন্দেহ নাই, এটা লকডাউনের সুফল। যেটুকু ঢিলেঢালা লকডাউন হয়েছে তারই সুফল।”

রাজধানীর মধুবাগে আসাদুজ্জামান খান কামাল কমিউনিটি সেন্টারে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ব্র্যাক পরিচালিত বুথে করোনাভাইরাসের নমুনা নিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যস্ততা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সরকার ৫ থেকে ১১ এপ্রিল একগুচ্ছ বিধিনিষেধ জারি করে। পরে বিধিনিষেধ আরও কঠোর করে ১৪ এপ্রিল থেকে জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, যা সর্বাত্মক লকডাউন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

এই লকডাউনের মেয়াদ আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময় গণপরিবহনও বন্ধ রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সাত লাখ ৪২ হাজার ৪০০ জন। এর আগে গত শনিবার ১৭ মার্চ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল সাত লাখ ১৫ হাজার ২৫২ জন।

গত ১১ থেকে ১৭ এপ্রিল, সাতদিনে মোট শনাক্ত হয়েছে ৩৬ হাজার ৩১৪ জন। এ সময় গড়ে দৈনিক শনাক্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ১৮৮ জন। এর মধ্যে ১২ এপ্রিল সর্বোচ্চ সাত হাজার ২০১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় কামাল উদ্দিনকে ভর্তি করা হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শনিবার করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ ফল আসার পর হাসপাতালে থাকতে না চাওয়ায় তাকে বাসাবোয় তার বাসায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

পরের সাতদিন অর্থাৎ, ১৭ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ২৭ হাজার ১৪৮ জন। দৈনিক গড়ে তিন হাজার ৮৭৮ জন। এর মধ্যে ২০ এপ্রিল সর্বোচ্চ চার হাজার ৫৫৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

সবচেয়ে কম শনাক্ত হয়েছে শনিবার, দুই হাজার ৬৯৭ জন। এর এক মাস তিন দিন আগে গত ২১ মার্চ দৈনিক শনাক্ত ছিল দুই হাজার ১৭২ জন।

গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে নয় হাজার ১৬৬ জন। এটি গত সপ্তাহের তুলনায় ২৫ দশমিক ২৪ শতাংশ কম।

এ সপ্তাহে দৈনিক নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী রোগী শনাক্তের হারও কমেছে।

১১-১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিন গড়ে পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৭৭ শনাক্ত। এ সপ্তাহে (১৭-২৪ এপ্রিল) তা প্রায় পাঁচ শতাংশ কমে ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশে নেমে এসেছে।

রাজধানীর মধুবাগে আসাদুজ্জামান খান কামাল কমিউনিটি সেন্টারে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ব্র্যাক পরিচালিত বুথে করোনাভাইরাসের নমুনা দিতে মানুষের ভিড়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

শনিবার নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। এক মাস আগে গত ২৫ মার্চও পরীক্ষা অনুযায়ী রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

১১-১৭ এপ্রিল করোনাভাইরাসে ৬২২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দৈনিক গড়ে মৃত্যু হয়েছে ৮৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

আর ১৮-২৪ এপ্রিল মৃত্যু হয়েছে ৬৭০ জনের, দৈনিক গড়ে ৯৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ সময় একদিনে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ১৯ এপ্রিল।

পূর্ববর্তী সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে ৪৮ জন বেশি মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন, যা ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, গত ৫ এপ্রিল থেকে লোকজনের চলাচল সীমিত করার যে ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে তারই ফলে সংক্রমণ নিম্নগামী হয়েছে।

তিনি বলেন, “ওই ব্যবস্থার একটা ফলাফল দেখতে পাচ্ছি আমরা। ১৪ এপ্রিল থেকে যে কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়েছে তার ফলাফলও আমরা সামনে দেখবে পাব বলে আশা করি। এই নিম্নমুখী প্রবণতাটা ধরে রাখতে হবে।

“একমাত্র মানুষের চেষ্টা, মানুষের হাইজেনিক বিহেভিয়ারের কারণে সংক্রমণ কমেছে। এমনটা গত নভেম্বরেও কমেছিল। সে সময় সবাই কিন্তু সতর্ক ছিল যে দ্বিতীয় ঢেউ না আসে। এবারও তাই হয়েছে। আবারও প্রমাণ হয়েছে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে, বিধিনিষেধ মেনে চললে সংক্রমণ কমানো যায়। এটা আপনাআপনি কমে না।”