মিতু হত্যার তদন্ত শেষ করতে আরও ৩ মাস সময় দিল হাই কোর্ট

সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করতে আরও তিন মাস সময় দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2021, 02:34 PM
Updated : 4 Feb 2021, 02:34 PM

আগামী ৬ মে পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখে আদালত এ সময় পর্যন্ত মামলার আসামি মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিমের জামিন আবেদনের শুনানি মুলতবি করেছে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন শংকর প্রসাদ দে। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।

গত বছর ২ ডিসেম্বর এক আদেশে হাই কোর্ট ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিল।

এ নির্দেশে গত ৩০ জানুয়ারি তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এতে বলা হয়, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। মামলার পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এজন্য তদন্ত সম্পন্ন করতে আরও সময় প্রয়োজন।

প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন।  

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মিতু।

চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন অভিযানের জন্য আলোচিত বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্ব থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

পরদিন ৬ জুন ভোরে নগরীর চকবাজার বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততাও মিতু হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তবে অল্প দিনেই সে ধারণা থেকে সরে আসেন তদন্তকারীরা।

হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে ২০১৭ সালের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নানা নাটকীয়তার মধ্যে দুই মাস পর বাবুলের চাকরি ছাড়ার কথা জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মিতুর বাবা ‍শুরুতে জামাতার উপর আস্থা রাখার কথা জানালেও পরে তিনি তাকেই সন্দেহ করার কথা জানান। তবে বাবুল তা অস্বীকার করে আসছেন। 

হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিনের মাথায় ২০১৬ সালের ২৬ জুন মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

পরে বলা হয়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তারা হত্যাকাণ্ডের মূল ‘পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছার নাম বলেছেন। আর হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি সরবরাহ করেন নগরীর বাকলিয়া এলাকার এহেতেশামুল হক ভোলা।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ হত্যাসহ প্রায় ছয় মামলার আসামি মুছা ছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তারের ‘সোর্স’। ভোলাকেও স্থানীয় অনেকে বাবুলের ‘সোর্স’ হিসেবে জানতেন।

পুলিশের ভাষ্য, মুছা এবং তার দুই সহযোগী নবী ও কালু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। এর মধ্যে নবী ও কালু ছুরিকাঘাত করেন বলে জবানবন্দিতে ওয়াসিম জানিয়েছেন।

পরে বাকলিয়া এলাকা থেকে ভোলা ও তার সহযোগী মনিরকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার করা পিস্তলটিই মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয় বলে পুলিশের ভাষ্য।

ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভোলা ও মনিরকে আসামি করে অস্ত্র আইনে একটি মামলা করা হয়। মিতু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ভোলাকেও।

ভোলা ও মনিরকে আসামি করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর আদালতে এই অস্ত্র মামলার বিচার শুরু হয়।

ভোলা ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলের ‘সরবরাহকারী’ মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাকু ও মো. শাহজাহানকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর নুরুল ইসলাম রাশেদ ও নুরুন্নবী ওই বছরের ৫ জুলাই পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

পুলিশের পক্ষ থেকে মুছাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টার কথা বলা হলেও তার পরিবারের দাবি, হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিনের মাথায় মুছাকে বন্দর থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পুলিশ নিয়ে গেছে।

চাঞ্চল্যকর এই মামলার কোনো কূলকিনারা এখন পর্যন্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

শেষ পর্যন্ত মামলাটির তদন্তভার আদালতের আদেশে গত বছর জানুয়ারিতে চলে যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই)। এখন পিবিআই কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা মামলাটির তদন্ত করছেন।