ভাইরাসভীতির মধ্যেই শীতের চিতই

ঢাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় অনেকেই বাইরে বের হওয়া এবং বাইরের খাবারে লাগাম টানলেও ক্রেতার অভাব হচ্ছে না শীত মওসুমের ভাসমান পিঠার দোকানগুলোতে।

সুমন মাহমুদ প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2020, 02:54 PM
Updated : 5 Dec 2020, 02:54 PM

শনিবার বিকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা ঘুরে বেইলি রোড, কাকরাইল, শান্তিনগরের ফুটপাতের দোকানে গরম-গরম ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠার স্বাদ নিতে দেখা গেছে বহু মানুষকে। সরিষা ভর্তা, মরিচ ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা, পুদিনা ভর্তা মাখিয়ে চিতই পিঠা খাচ্ছিলেন তারা।

বেইলি রোডে রয়েছে পিঠাঘরের সুবিশাল দোকান। এছাড়া রাস্তার দুই পাশের পরিচ্ছন্ন ফুটপাতে চিতই আর ভাঁপা পিঠার কয়েকটি ভাসমান দোকান বসেছে। বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এসব দোকানে পিঠাপ্রেমীদের ভিড় লেগে থাকে।

বেইলি রোডের নওরতন অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা আমীরুল ইসলাম খান স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সন্ধ্যায় আসেন বেইলি রোডের পিঠাঘরের চিতই পিঠা খেতে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শীত শীত বাতাসে পিঠাবঞ্চিত থাকবে আমার খুকু-খুকিমনি এটা কি হয়? গরম-গরম পিঠার স্বাদই অন্য রকম।”

নবান্ন, পৌষ পার্বনে নতুন ধানের চালের পিঠার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আকর্ষণ। ডিসেম্বরে স্কুল-কলেজে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে তাই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অনেকেই গ্রামে যান পিঠা-পুলি খাইয়ে আনতে।

এবার করোনাভাইরাসের কারণে সেই সুযোগ না হওয়ায় সন্তানদের পিঠার স্বাদ নেওয়া থেকে বঞ্চিত করতে চান না শাকিলা জামান।

সন্ধ্যায় গরম চিতই পিঠা ফুঁ দিয়ে দিয়ে খেতে খেতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি শীতে এই সময়ে আমরা গ্রামের বাড়ি যাই। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার সেই যাওয়াটা হচ্ছে না। তাই এখানে এসে গরম-গরম পিঠা খাওয়ার স্বাদ নিচ্ছি।

“স্বাস্থ্য বিধি মেনেই পিঠা খেতে এসেছি। বেইলি রোডে চিতই পিঠার ধোঁয়া দেখে মনে পড়ে গ্রামের বাড়িতে শীতের পিঠা তৈরির কথা। সেজন্য পিঠার লোভ সামলাতে না পেরে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চলে এসেছি।”

বেইলি রোডের অনেক অ্যাপার্টমেন্ট থেকেও মোবাইলে পিঠার অর্ডার আসে বলে জানালেন দোকানদার সিদ্দিকুর রহমান।

তিনি বলেন, “টেলিফোনে অর্ডার দিলে আমরা এখান থেকে গরম-গরম চিতই পিঠা বলুন অথবা ভাঁপা পিঠা বলুন পৌঁছিয়ে দিয়ে থাকি। তবে এটা শুধু বেইলি রোড এলাকার অ্যাপার্টমেন্টবাসীদের জন্য। এসব অ্যাপার্টমেন্টে আমাদের পারমানেন্ট কিছু কাস্টমার আছে।”

ভাঁপার চেয়ে চিতই পিঠার চাহিদা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, “আখের গুড়-নারিকেল দিয়ে ভাঁপা পিঠাও করি। তবে কাস্টমার কম থাকে। বেশি কাস্টমার চিতই পিঠার। খেজুরের গুড়, কুচি কুচি নারিকেল দিয়ে ভাঁপা পিঠা একটার বেশি দুইটা কেউ খেতে চান না। চিতই পিঠা ভালো করে খোলায় তৈরি করলে একেকজন দুইটাও খান অনায়াসে। আর যদি ভর্তা থাকে তো কথাই নেই।”

দোকানদাররা জানান, বেইলি রোডের ফাস্ট ফুডের দোকানগুলোতে আগে বিকাল বেলা ভিড় থাকত। এখন বিকাল বা সন্ধ্যার নাস্তাটা অনেকে পিঠা দিয়ে সারছেন।

“পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব মিলে একসাথে পিঠা খেতে ভালোই লাগে,” বলেন সাহিদুল ইসলাম।

একটি মানবাধিকার সংস্থার এই কর্মী বলেন, “সরিষা অথবা ধনেপাতা ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার স্বাদই অন্য রকম। সেটা বেইলি রোডে একটা প্যাটিস বা বার্গার খেয়ে পাবেন না।”

বেইলি রোডের পিঠা বাজারের মতো একই চিত্র দেখা যায় শান্তিনগর এলাকার ‍ফুটপাতের পিঠার দোকানগুলোতে। সেখানে ফুটপাতের একপাশে ১০টি কড়াই বসিয়ে পিঠা বানিয়ে বিক্রি করেন শেফালী বেগম। একেকটা চিতই পিঠা ৭ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। ভাঁপা পিঠা ১০ টাকা।

প্রতিদিন গড়পড়তায় ২৫০-৩০০ পিঠা বিক্রি হয় বলে জানান শেফালী।

আতপ চাল মেশিনে গুঁড়া করে গরম পানিতে মিশিয়ে চিতই পিঠা তৈরি করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আগে বিক্রি করতাম পিঁয়াজু-ছোলা বুট। এখন সেভাবে পিঁয়াজু খায় না। চিতই পিঠারই কদর বেশি।”

এক কেজি আতপ চালের দাম ৫০ টাকা। প্রতিদিন বিকালে আতপ চাল গুঁড়া করে এনে পিঠা তৈরিতে বসে যান শেফালী বেগম।

তিনি বলেন, “চিতই পিঠার মধ্যে চালের গুঁড়া ও পানির পরিমাণ ঠিক রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিদিন এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে পিঠা বানাতে হয় আমাকে। পিঠা খাওয়ার পর যখন বলে, আপা আরেকটা পিঠা দেন গরম। তখন বুঝি আমি চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পেরেছি।”

শেফালী বলেন, “আতপ চাল, কেরোসিন তেল সব মিলিয়ে হিসাব করলে লাভ মন্দ না। তবে এটা কপালের ব্যাপার। বেশি বিক্রি বেশি লাভ। তবে কম বিক্রি বেশি লস। বুঝাইতে পারছি?”