এসপিপত্নী মিতু হত্যা তদন্তের অগ্রগতি জানতে চায় হাই কোর্ট

চার বছর আগে চট্টগ্রামে তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2020, 04:28 PM
Updated : 2 Dec 2020, 05:53 PM

আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বুধবার এ মামলায় কারাবন্দি আসামি মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিমের জামিন শুনানির সময় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী শংকর প্রসাদ দে। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

পরে মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী সাংবাদিকদের বলেন, “ওয়াসিমের জামিন শুনানিকালে গত ২৩ নভেম্বর মামলার নথিসহ (সিডি) তদন্ত কর্মকর্তাকে বুধবার হাজির হতে বলেছিলেন আদালত।

স্বামী বাবুল আক্তারের সঙ্গে মাহমুদা খানম মিতু; ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম শহরে হত্যা করা হয়েছিল তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুলের স্ত্রীকে।

“আদেশ অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা হাজির হয়ে বলেছেন, তিনি কিছু দিন আগে তদন্তভার পেয়েছেন। এরপর আদালত ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তদন্তের অগ্রগতির লিখিত প্রতিবেদন চেয়েছেন। আর জামিন আবেদন ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রেখেছেন।” 

আইনজীবী শংকর প্রসাদ দে জানান, তার মক্কেল (ওয়াসিম) সাড়ে চার বছর ধরে জেলে আছেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। সে সময় পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিয়ে ঢাকায় ছিলেন বাবুল।

চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন অভিযানের জন্য আলোচিত বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্ব থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

পরদিন ৬ জুন ভোরে নগরীর চকবাজার বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততাও মিতু হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তবে অল্প দিনেই সে ধারণা থেকে সরে আসেন তদন্তকারীরা।

হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে ২০১৭ সালের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেওয়ার খবর ছড়ালেও সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলছিলেন না।

তার ২০ দিন পর ২০১৭ সালের ১৪ অগাস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, বাবুলের অব্যাহতির আবেদন তার কাছে রয়েছে। আরও ২২ দিন পর ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি নেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশের সন্দেহের তালিকায় তাকে রাখা হয়েছে কি না সে বিষয়ে কখনোই স্পষ্ট উত্তর দেননি তদন্তকারীরা।

হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিনের মাথায় ২০১৬ সালের ২৬ জুন মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুইজনকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

পরে বলা হয়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তারা হত্যাকাণ্ডের মূল ‘পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছার নাম বলেছেন। আর হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি সরবরাহ করেন নগরীর বাকলিয়া এলাকার এহেতেশামুল হক ভোলা।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ হত্যাসহ প্রায় ছয় মামলার আসামি মুছা ছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তারের সোর্স। ভোলাকেও স্থানীয় অনেকে বাবুলের সোর্স হিসেবে জানতেন।

পুলিশের ভাষ্য, মুছা এবং তার দুই সহযোগী নবী ও কালু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। এর মধ্যে নবী ও কালু ছুরিকাঘাত করেন বলে জবানবন্দিতে ওয়াসিম জানিয়েছেন।

পরে বাকলিয়া এলাকা থেকে ভোলা ও তার সহযোগী মনিরকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার করা পিস্তলটিই মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয় বলে পুলিশের ভাষ্য।

ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভোলা ও মনিরকে আসামি করে অস্ত্র আইনে একটি মামলা করা হয়। মিতু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ভোলাকেও।

ভোলা ও মনিরকে আসামি করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর আদালতে এই অস্ত্র মামলার বিচার শুরু হয়।

ভোলা ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলের ‘সরবরাহকারী’ মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাকু ও মো. শাহজাহানকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর নুরুল ইসলাম রাশেদ ও নুরুন্নবী ওই বছরের ৫ জুলাই পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

পুলিশের পক্ষ থেকে মুছাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টার কথা বলা হলেও তার পরিবারের দাবি, হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিনের মাথায় মুছাকে বন্দর থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পুলিশ নিয়ে গেছে।

মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার ২০১৬ সালের ৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, ২২ জুন বন্দর থানার তৎকালীন ওসি মহিউদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল মুছাকে গ্রেপ্তার করে।

চাঞ্চল্যকর এই মামলার কোনো কূল কিনারা এখন পর্যন্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

শেষ পর্যন্ত মামলাটির তদন্তভার আদালতের আদেশে গত জানুয়ারিতে চলে যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই)। এখন পিবিআই কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা মামলাটির তদন্ত করছেন।