বর্ষার আগেই খাল উদ্ধারের ঘোষণা তাপসের

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ষা মৌসুমের আগেই অবৈধ দখল উচ্ছেদের মাধ্যমে খালগুলো পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2020, 11:37 AM
Updated : 1 Dec 2020, 11:37 AM

মঙ্গলবার দুপুরে শ্যামপুরের বড়ইতলী এলাকায় শ্যামপুর খালের চলমান বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

মেয়র বলেন, “আমরা ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি। স্বল্পমেয়াদের কার্যক্রমগুলো আমরা নিজ অর্থায়নেই আরম্ভ করে দিচ্ছি। মূলত প্রথম কাজটি হল, যে দখলগুলো আছে সেগুলো দখলমুক্ত করা। বর্ষা মৌসুমের আগেই দক্ষিণ সিটির খাল দখলমুক্ত করা হবে।

দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি খাল। ঢাকার নন্দীপাড়া খালটিতে দীর্ঘদিন ধরে জমা ময়লা-আবর্জনার স্তূপে সবুজ আগাছা ও ছোট গাছও জন্মেছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে (সিএস খতিয়ান) দেখে আমরা সীমানা নির্ধারণ করব, আমরা খালগুলো দখলমুক্ত করব এবং খালের মধ্যে যেসব বর্জ্য রয়েছে তা আমরা অপসারণ করব। এর মাধ্যমে আমরা জলপ্রবাহ পুনরুদ্ধার করব এবং জলপ্রবাহ পুনরুদ্ধার হলে ঢাকার যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে সেসব জায়গায় আর জলাবদ্ধতা হবে না বলে আমরা আশাবাদী। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামী দুই বছরের মধ্যে ঢাকাবাসীকে আমরা জলাবদ্ধতা থেকে অনেকাংশেই মুক্ত করতে পারব।”

এ সময় বক্স কালভার্ট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, “বক্স কালভার্টগুলো বিশেষ করে পান্থপথ ও ধোলাইখালের বক্স কালভার্টগুলো দীর্ঘদিন ধরে সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। আমরা অচিরেই সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ আরম্ভ করব এবং পরবর্তীতে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় কী করা যায়, বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেই কার্যক্রম হাতে নেব।”

খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় ওয়াসার জনবল সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর প্রসঙ্গে তাপস বলেন, “এ বিষয়ে আমরা সভাতে আলাপ-আলোচনা করেছি। যতটুকু জনবল এবং যন্ত্রপাতি আমাদের যা প্রয়োজন হবে, সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করেই আমরা নেব। গৎবাঁধা সকল জনবল আমরা নেব না, আমাদের যেটা প্রয়োজন নাই সেটা আমরা নেব না। এ ব্যাপারে গঠিত কমিটি সকল বিষয় পর্যালোচনা করে এক মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করবে। সেই রূপরেখার আলোকে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”

এর আগে সকালে জিরানি খালের ত্রিমোহনী এলাকা পরিদর্শন করেন মেয়র ফজলে নূর তাপস। এ সময় সিএস খতিয়ান অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে খাল দখল করে নির্মাণ করা বাড়ি-ঘরগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন তিনি।

ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে রাজধানীর নন্দীপাড়া খাল। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

জিরানি খাল পরিদর্শন শেষে শ্যামপুর খালের চলমান বর্জ্য অপসারণ ও সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম পরিদর্শনে যাওয়ার পথে নন্দীপাড়া অংশে জিরানি খালের অবস্থা দেখে হতাশা প্রকাশ করেন মেয়র।

তিনি বলেন, “পানি আসার সুযোগ নাই! পানি আসবে কীভাবে?”

সিএস খতিয়ান অনুযায়ী খালের মধ্যে গড়ে ওঠা সব অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে সেগুলো দ্রুত ভেঙে ফেলে খালের মধ্যকার বর্জ্য-আবর্জনা পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন তিনি।

পরে মেয়র শ্যামপুর খালের আরেক প্রান্ত, মতিঝিলের সিটি টাওয়ার, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের রাস্তা ও ফুটপাত এবং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সম্মুখস্থল ও ওসমান গনি রোড পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।

পরিদর্শনকালে অন্যদের মধ্যে ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, স্থানীয় কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।