স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত রফিক-উল হক

বনানী কবরস্থানে স্ত্রী ফরিদা হকের কবরের পাশে সামহিত হলেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2020, 10:39 AM
Updated : 24 Oct 2020, 02:20 PM

অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময়ের প্রিয় কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে শনিবার বেলা দুইটায় জানাজা শেষে সেখানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে ‍মৃত্যু হয় ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতাল সংলগ্ন মসজিদে ব্যারিস্টার রফিকের প্রথম জানাজার পর মরদেহ পল্টনের বাড়িতে নেওয়া হয়।

সেখান থেকে মরদেহে নেওয়া হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। বাদ জোহর সেখানে দ্বিতীয় জানাজার পর মরদেহ নেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে।

সুপ্রিম কোর্টে তার তৃতীয় জানাজায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, আইনজীবীরা অংশ নেন।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের ছেলে দেশের বাইরে থাকায় তার বড় ভাইয়ের ছেলে মিজবাউল হক সবার কাছে দোয়া চান।

জানাজা শেষে রফিক-উল হকের কফিনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়।

এছাড়া সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতি, সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরম, আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানায়।

এরপর বিকালে ব্যারিস্টার রফিককে বনানী কবরস্থানে নিয়ে স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা জটিলতা নিয়ে গত ১৫ অক্টোবর ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। এর মধ্যে তার স্ট্রোকও হয়েছিল। গত মঙ্গলবার থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। মা নূরজাহান বেগম। তার বাল্যকাল কেটেছে কলকাতায়। পড়াশোনা করেছেন চেতলা স্কুলে।

রফিক-উল হক (ফাইল ছবি)

রফিক-উল হক ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ১৯৫১ সালে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৫৮ সালে এলএলবি করেন। এরপর ১৯৬০ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আইন পেশা শুরু করেন রফিকুল হক।

যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তৎকালীন পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৬২ সালে ঢাকা হাই কোর্টে আইনপেশায় যুক্ত হন। 

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৫ সালে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন রফিক-উল হক। 

এছাড়া রফিকুল হক ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল ও বার কাউন্সিল ইলেকশন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয় তাকে। তখনই তিনি পদাধিকারবলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন। এসময় তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও প্রতিনিধিত্ব করেন।

২০০৭ সালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা জরুরি ক্ষমতা বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করার পর বেরিয়ে আসছেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। (ফাইল ছবি)

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিবিদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই করে আলোচনায় ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক।

ব্যারিস্টার রফিক বিভিন্ন সময় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৩ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক (ফাইল ছবি)

সমাজ ও মানবতার সেবায় তার হাত ছিল সবসময়ই উদারহস্ত। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজ-মানবতার সেবায়।

১৯৯৫ সালে রফিক-উল হক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুবর্ণ ক্লিনিক; ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা ছিল তার।

আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন।