ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের জীবনাবসান

প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আর নেই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2020, 03:33 AM
Updated : 24 Oct 2020, 08:14 AM

ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে ‍মৃত্যু হয়েছে তার।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে আলোচিত ছিলেন।

নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও নিজে যুক্ত রেখেছিলেন ব্যারিস্টার রফিক।

২০১৩ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক (ফাইল ছবি)

আদ-দ্বীন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক। তার মৃত্যুতে হাসপাতালটির চিকিৎসকসহ সবার মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আদ-দ্বীন হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তবিবুর রহমান আকাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতাল সংলগ্ন মসজিদে ব্যারিস্টার রফিকের জানাজার পর মরদেহ পল্টনের বাড়িতে নেওয়া হবে।

সেখান থেকে মরদেহে নেওয়া হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। বাদ জোহর সেখানে জানাজার পর মরদেহ নেওয়া হবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জানাজার পর বিকালে ব্যারিস্টার রফিককে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে আকাশ জানান।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রফিক-উল হক (ফাইল ছবি)

ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা জটিলতা নিয়ে গত ১৫ অক্টোবর ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক। এর মধ্যে তার স্ট্রোকও হয়েছিল। গত মঙ্গলবার থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

হাসপাতালটির মহাপরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যু ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

তার অসুস্থতা নিয়ে ডা. নাহিদ বলেন, “মেইন সমস্যা যেটা ছিলো স্যারের একুয়েস্টামিক স্ট্রোক, সিভিয়ার ইউরিন ইনফেকশন ও নিফিশিয়াল ডেফেসিন্সি। সর্বশেষ তিনি সেফটিক শক, মাল্টি অরগান ডিস ফাংশন সিমড্রোম-এই অবস্থায় স্যার সাড়ে ৮টায় আমাদের আইসিইউতে মৃত্যৃবরণ করেন।”

রফিক-উল হকের মৃত্যুর পর সাংবাদিকদের সামনে আদ-দ্বীন হাসপাতালের মহাপরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন

রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালে কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। মা নূরজাহান বেগম। তার বাল্যকাল কেটেছে কলকাতায়। পড়াশোনা করেছেন চেতলা স্কুলে।

রফিক-উল হক ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ১৯৫১ সালে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৫৮ সালে এলএলবি করেন। এরপর কলকাতা হাই কোর্টে আইন পেশা শুরু করেন রফিকুল হক।

১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তৎকালীন পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে চলে আসেন ঢাকায়।

১৯৬৫ সালে হাই কোর্টের আইনজীবী তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন রফিক-উল হক।  

১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয়েছিল তাকে।

২০০৮ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক (ফাইল ছবি)

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিবিদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই করে আলোচনায় ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক।

ব্যারিস্টার রফিক বিভিন্ন সময় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সমাজ ও মানবতার সেবায় তার হাত ছিল সবসময়ই উদারহস্ত। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজ-মানবতার সেবায়।

১৯৯৫ সালে রফিক-উল হক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুবর্ণ ক্লিনিক; ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা ছিল তার।

আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন।

আরও খবর