আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে আট ঘণ্টা বাদী বরকত উল্লাহকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। শিবির সংক্রান্ত এসব প্রশ্নের উত্তরে ‘না’ বলেন তিনি।
ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বরকতউল্লাহকে জেরার মধ্য দিয়ে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হল।
বুধবার মামলার রেকর্ডিং কর্মকর্তা এসআই সোহরাব হোসেন এবং সুরতহালের সাক্ষী এস আই দেলোয়ার হোসেন সাক্ষ্য দেবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূঞা।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে শিবিরকর্মী আখ্যায়িত করে গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।
পরদিন আবরারের বাবা বুয়েটের ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ মোট ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আসামিদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।
সোমবার ট্রাইব্যুনালে বাদী বরকতউল্লাহর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। কুষ্টিয়ার অবসরপ্রাপ্ত এই ব্র্যাককর্মী জবানবন্দি দিতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে সন্তান হত্যার বিচার চান।
মঙ্গলবার জেরায় বরকত উল্লাহকে আসামি পক্ষের এক আইনজীবী বলেন, আবরার ছাত্রশিবিরে যুক্ত ছিলেন।
উত্তরে না বলেন আবরারের বাবা।
আরেক আইনজীবী বলেন, শিবিরের কমীদের ইন্ধনে ছাত্রলীগের কমীদের উপর দায় চাপিয়ে এ মামলার এজাহার করা হয়েছে এবং এজাহার দাখিলের সময় শিবিরের সদস্যদের দিয়ে বাদী পরিবেষ্টিত ছিলেন।
এ কথার উত্তরেও ‘না’ বলেন বাদী।
আবরারের লাশ কয়েকজন শিবিরকর্মী ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে নিয়ে বাদীর শ্যালক আব্দুল কাদেরকে বুঝিয়ে দেন বলে দাবি করেন এক আইনজীবী।
একথায় বাদী বলেন, “আমি তাদের চিনি না। আমি মর্গে ঢুকি নাই, বাইরে ছিলাম।”
যে দুজন ছাত্র আবরারকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মামলায় আসামি করা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় আবরারর বাবাকে, তবে তিনি নিরুত্তর থাকেন।
আসামি পক্ষের এক আইনজীবী বলেন, “আপনি এমনভাবে শিবিরের কমীদের দিয়ে পরিবেষ্টিত ছিলেন যে আপনি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাউকে হত্যার বিষয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেন নাই।”
বরকত উল্লাহ তা অস্বীকার করলেও মামলা করার বিষয়ে বুয়েট ভিসি কিংবা প্রক্টরের কাছে কোনো তথ্য জানতে না চাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
এক আইনজীবী প্রশ্ন করেন, “আবরারকে কারা কারা ডেকে নিয়েছিল এবং ২০১১ নম্বর কক্ষে কারা ছিল, তা আপনি জানেন?”
এসময় মৌন ছিলেন বরকত উল্লাহ।
এক আইনজীবী বলেন, “বুয়েট কর্তৃপক্ষ আবরার হত্যার দায় এড়াতে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। এ ঘটনাটি বুয়েট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ঘটেছে। যেহেতু আপনি (বাদী) শিবিরের সদস্যদের দিয়ে পরিবৃত ছিলেন, সে কারণে আপনি আবরার হত্যার দায় আপনার অজান্তেই আসামিদের উপর চাপিয়েছেন।”
এ মামলায় আপনি নিজে বাদী না বুয়েট থেকে মামলা করা হয়- আসামি পক্ষের আইনজীবীর এই প্রশ্নে বুয়েট কর্তৃক নিয়োজিত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী প্রতিবাদ করেন।
এনিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, আবু আবদুল্লাহ ভূঞা ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ, মঞ্জুর আলম মঞ্জু, শহীদুল ইসলামের মধ্যে তুমুল বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। পরে বিচারকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আসামি অমিত সাহার আইনজীবী মঞ্জু বাদীকে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, অমিতের নাম এজহারে নেই, আর বাদীও তার জবানবন্দিতে অমিতের নাম ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে কিছু বলেননি।
সকাল সাড়ে ১০টায় থেকে দুপুর দেড়টা একটানা জেরা করা হয় আবরারের বাবাকে। এক ঘণ্টা বিরতির পর দুপুর আড়াইটা থেকে আবার জেরা শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা অবধি চলে।
আসামি মনিরুজ্জামান মনিরের পক্ষে আইনজীবী শহীদুল ইসলাম, আসামি মতিউল, শামীম বিল্লাহ, মিজানুর রহমান মিজান, এসএম মাহমুদ সেতুর পক্ষে ফারুক আহম্মদ জেরা করেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে ২২ জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকি তিনজনকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলছে।