গত ২০ জুলাই থেকে ১০ অগাস্ট ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি পরিচালিত ‘কোভিড-১৯ মহামারীকালে কার্যকর মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক গবেষণায় অংশ নেয় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।
সোমবার এক ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে বলা হয়, ৯৩ দশমিক ৪ ভাগ বর্জ্যই সঠিক ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন উৎপন্ন হওয়া প্রায় ২৪৮ টন বর্জ্যের মাত্র ৩৫ টন বা ১৪ দশমিক ১ শতাংশ সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনা করা হয়, যার অধিকাংশই রাজধানীতে সীমাবদ্ধ।
বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থাপনা থাকলেও তা বিনষ্ট করার নিজস্ব ব্যবস্থাপনা নেই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর।
এছাড়া করোনাভাইরাসের সুরক্ষা সামগ্রী থেকে প্রতিদিন ২৮২ দশমিক ৪৫ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার পুরোটাই গৃহস্থালি বর্জ্যের সাথে অপসারণ করা হয়।
মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও ৮২ দশমিক ১ ভাগ অংশগ্রহণকারীর কাছে তা ‘অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে’। প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ সুরক্ষা সামগ্রী পুনঃব্যবহার করেন।
জরিপে স্বাস্থ্যখাতে সেবাদানকারী ৩০০ জন অংশ নেন, যাদের মধ্যে ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধি’ সম্পর্কে জানেন ৪৩ দশমিক ৬ ভাগ। ৮৪ ভাগ চিকিৎসাকর্মী মনে করেন, বর্তমান মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক। এই সমস্যা সমাধানে সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা এবং তা বাস্তাবায়ন দরকার বলে মনে করেন ৯০ দশমিক ৩ ভাগ চিকিৎসাকর্মী।
গবেষণায় অংশ অংশ নেওয়া ২০ জন স্বাস্থ্য, জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বাসা-বাড়ি ও চিকিৎসা কেন্দ্রে কোভিড-১৯ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তর নির্দেশিকা ও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি।
ওয়েবিনারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা মোকাবেলায় চারটি বিষয়ে জোর দেওয়ার তাগিদ দেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, “সচেতনতাকে অভ্যাসে নেওয়া, সমন্বিত উদ্যোগ, ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা অর্জন ও লাগসই সমাধানের কৌশল নির্ধারণ প্রয়োজন। এই দায়িত্বপালনের সুস্পষ্ট বিভাজন দরকার। স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে এই সমন্বয়ের পদক্ষেপ নিতে পারে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহাম্মদ বলেন, “বিদ্যমান কাঠামোয় মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বা উদ্যোগ নেই, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই সংকট সমাধান সম্ভব।”
ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “হাসপাতালের বর্জ্যও সাধারণ বর্জ্যের সাথে চলে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে হাসপাতাল বর্জ্য আলাদাভাবে হস্তান্তর করা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা দরকার।”
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে স্বীকার করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “গৃহস্থালি বর্জ্য আলাদাভাবে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকার দুই কোটি মানুষের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আনা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।
“হাসপাতালগুলোতেও মেডিকেল বর্জ্য ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা হচ্ছে না, অথচ এটি খুবই জরুরি। এ বিষয়ে একটি আইনও হওয়ার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, সব হাসপাতালেই বর্জ্য পুড়ানোর ব্যবস্থা থাকবে।”
কিছু হাসপাতাল চিকিৎসা বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দূষিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি ছাড়া কোনো হাসপাতাল ভবিষ্যতে থাকবে না। এটি হয়ত এখনই সম্ভব না, তবে আমরা সেটি করব।
“গণমাধ্যমসহ সবাইকে এক্ষেত্রে একসাথে কাজ করা উচিত। সচেতনতা বাড়াতে পারলে এবং সবাই এক হয়ে কাজ করলে কঠিন হলেও এটি করা অসম্ভব হবে না।”