সিলেটে মাজারে ‘হামলার পরিকল্পনা ছিল’ নব্য জেএমবির: সিটিটিসি প্রধান

সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় নব্য জেএমবির সদস্যরা রাজধানীর পল্টন ও নওগাঁর সাপাহারে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2020, 08:21 AM
Updated : 12 August 2020, 03:07 PM

সিলেটে নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশের বিশেষ এই ইউনিটের প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।

সিলেট থেকে গ্রেপ্তাররা হলেন- শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান (২৬), সায়েম মির্জা (২৪), রুবেল আহমেদ (২৮), সানাউল ইসলাম সাদিক (২৮)ও আব্দুর রহিম জুয়েল (৩০)।

ঈদের আগে ঢাকার পল্টনে পুলিশের মোটরসাইকেলে বোমা রাখার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিটিটিসি এবং পুলিশ সদরদপ্তরের ল ফুল ইন্টারসেপশন সেলের (এলআইসি) একটি দল গত রোববার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত সিলেটের মিরাবাজার, টুকেরবাজার ও দক্ষিণ সুরমায় অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ল্যাপটপ ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, “নব্য জেএমবির এই দলটি ২৩ জুলাই হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে হামলার পরিকল্পনা করেছিল।

“কিন্তু পুলিশের কড়া নজরদারিতে তারা ব্যর্থ হয়ে, ২৪ জুলাই পল্টন চেকপোস্টের পাশে ও ৩১ জুলাই নওগাঁ জেলার সাপাহার এলাকায় হিন্দু মন্দিরে বোমা হামলা করে। নওগাঁয় বিস্ফোরিত হয় ছোট্ট একটি ককটেল।”

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদেরকে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য বলেছে। কথিত আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এসব হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানিয়েছে।”

মনিরুল জানান, নব্য জেএমবির শুরা সদস্য শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামানের নেতৃত্বে শাপলাবাগের একটি বাসায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণের আড়ালে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছি।

“নাইমুজ্জামান ২০১৯ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স করেছে এবং ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিল। সংগঠনের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতেই সে শাপলাবাগের বাসাটি ভাড়া নেয়।”

গ্রেপ্তার অন্যদের মধ্যে সানাউল ইসলাম সাদিক শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। রুবেল আহমেদ ২০১৬ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্লু বার্ড সিলেট শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। টুকেরবাজারে সার, বীজ ও কীটনাশকের ব্যবসা আছে তার।

আব্দুর রহিম জুয়েল রেন্ট-এ-কারের চালক। তার গাড়ি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আর সায়েম মির্জা মদন মোহন কলেজের অর্নাস শেষ বর্ষের; তিনিও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত।

মনিরুল ইসলাম বলেন, নব্য জেএমবির এই দলের আরও কয়েকজন সদস্য পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, জঙ্গিদের এখন বড় হামলা করার সামর্থ্য নেই।

২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই হামলাটি জেএমবির দিক থেকে ছিল সাংগঠনিক এবং সফল। তবে বর্তমানে সাংগঠনিক কাঠামো তাদের নেই।”

পুরনো জেএমবির নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন ভারতে লুকিয়ে থাকতে পারে বলে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান।

গ্রেপ্তার ৫ জনই রিমান্ডে

নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের হেফাজতে পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে বুধবার তাদের ঢাকার আদালতে নিয়ে যান তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম।

ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে সাত দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।

আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় তাদের কিছু বলার আছে কি না জিজ্ঞেস করেছিলেন বিচারক। তারা বলেন, তাদের কিছুই বলার নেই।

গত ২৪ জুলাই পল্টন মডেল থানার পুরানা পল্টন এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হলে পল্টন মডেল থানায় একটি মামলা হয়, সেই মামলায় এ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানে হয়েছে।