মহামারীতে পত্রিকায় নারী-শিশু নির্যাতনের ‘খবর কম’

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত পাঁচ মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে পত্রিকায় নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশ কমেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2020, 10:09 AM
Updated : 11 August 2020, 11:35 AM

মঙ্গলবার প্রকাশিত জুলাই মাসের হালানাগাদসহ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে যে চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে এধরনের খবর প্রকাশ প্রায় ৩৭ শতাংশ কমেছে। 

তবে সম্প্রতি নারী ও শিশুদের সহিংসতার শিকার হওয়া বেড়ে গেলেও মহামারীতে তথ্যপ্রবাহের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না বলে মনে করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

১৩টি জাতীয় দৈনিকের সংবাদ পর্যালোচনার ভিত্তিতে মহিলা পরিষদ বলছে, জুলাইয়ে দেশে ২৩৫টি নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশ হয়েছে। মার্চ থেকে পাঁচ মাসে মোট একহাজার ২২৮টি ঘটনার খবর এসেছে।

যেখানে ১৪টি দৈনিকের সংবাদ পর্যালোচনায় গত বছর জুলাই মাসে ৪৫০টি ও মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত এক হাজার ৯৪৩ নারী ও শিশু নির্যাতনের খবর পেয়েছিল মহিলা পরিষদ।

মালেকা বানু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পত্রিকায় যেগুলো পাচ্ছি, সে তথ্যই তো আমরা দিচ্ছি। তাই সব তথ্য আমরা দিতে পারছি না। তবে গণমাধ্যমে সব তথ্য উঠে আসছে না। তবে আমরা যারা এসব নিয়ে কাজ করছি, তারা দেখছি নির্যাতনের ঘটনা আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে গেছে।

“ধর্ষণের ঘটনা অনেক বেড়েছে। আমরা যেহেতু কাজ করছি, আমাদের কাছে বিষয়গুলো আসছে। কিন্তু গণমাধ্যমে সব তথ্যগুলো উঠে আসছে না।”

গণমাধ্যমে সব তথ্য না আসার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এখন যে পরিস্থিতি, তাতে খুব আলোচিত ঘটনা না হলে গণমাধ্যমে আসছে না। সবারই সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, গণমাধ্যমেরও রয়েছে, আমাদেরও রয়েছে।”

মহিলা পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জুলাইতে ২৩৫টি নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৯০ জন, গণধর্ষণের শিকার ১৪ জন ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৯ জনকে এবং শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন ৩ জন।

জুলাইয়ে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে ৭ জনকে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে ৪৬ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। নির্যাতনের কারণে ১০ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।

গত বছরের মার্চ থেকে জুলাই- এই পাঁচ মাসে মোট এক হাজার ৯৪৩ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশ হয়। এর মধ্যে মার্চে ২৬৭, এপ্রিলে ৪০১, মেতে ৪০৫, জুনে ৪২০ ও জুলাইয়ে ৪৫০টি ঘটনার খবর এসেছে।

এর মধ্যে জুলাইয়ে মোট ৪৫০ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩৭ জন, গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৩ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১০ জনকে এবং ধর্ষনের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন ১ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছেন ৫ জন। সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছেন ৫ জন। ৬ জন গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

গত এক মাসে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৫টি। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ জন।