বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নকল মাস্ক সরবরাহের মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমিন জাহানকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
Published : 25 Jul 2020, 02:07 PM
শারমিনের করা জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম শনিবার এই আদেশ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিনের মালিকানাধীন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করেছে অভিযোগ করে শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিএসএমএমইউর প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ।
ওই মামলায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শারমিন জাহানকে। পরে রাতে তাকে শাহবাগ থানা থেকে মামলা তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শনিবার দুপুরে শারমিনকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন পুলিশ পরিদর্শক মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস। অন্যদিকে শারমিনের পক্ষে তার আইনজীবী পনির হোসেন জামিনের আবেদন করেন।
শুনানিতে পনির বলেন, “তিনি (শারমিন) সরল বিশ্বাসে মাস্ক সরবরাহ করেছেন, তার কোনো গিল্টি মাইন্ড ছিল না। তিনি কোনো নকল মাস্ক সরবরাহ করেননি। তাছাড়া অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পুলিশ দেখাতে পারবে না।”
এ সময় বিচারক কাঠগড়ায় দাঁড়ানো শারমিনকে জিজ্ঞাসা করেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় তিনি কীভাবে, কোন নিয়মে, কোন ক্ষমতায় মাস্কের ব্যবসায় নিয়োজিত হলেন।
উত্তরে শারমিন বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মত অনেকে আছেন, যারা নানারকম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। শুধু আমার বেলায় কেন দোষ চাপানো হচ্ছে?”
সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শারমিন এ সময় তার ছাত্রজীবন এবং রাজনৈতিক জীবনের কমর্কাণ্ড সম্পর্কে বলতে শুরু করলে বিচারক তাকে থামিয়ে দেন।
শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে শারমিনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বলে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হীরণ জানান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শারমিনের মালিকানাধীন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ২৭ জুন ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। এর বিপরীতে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ৩০ জুন প্রথম দফায় ১৩০০, ২ জুলাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ৪৬০ ও ১০০০ এবং চতুর্থ দফায় ৭০০ মাস্ক সরবরাহ করে।
কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় পণ্য ‘সামগ্রিক গুণগতমানের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাওয়া যায়নি’ অভিযোগ করে এজাহারে বলা হয়, “কোনো কোনো ফেইস মাস্কের বন্ধনী ছিঁড়ে গেছে, কোনো মাস্কের ছাপানো ইংরেজিতে লেখা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এ ধরনের ত্রুটিতে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, মাস্ক নিম্নমানের ছিল। এর ফলে কোভিড-১৯ এর সম্মুখযোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারত।
“এ বিষয়ে ১৮ জুলাই অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় বিএসএমএমইউ। ২০ জুলাই লিখিত জবাবে শারমিন দুঃখপ্রকাশ করেন, যা আসামির দোষ স্বীকারের শামিল।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর শারমিন ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ না পেলেও দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
শারমিন ২০১৬ সালের ৩০ জুন স্কলারশিপ নিয়ে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উহানে লকডাউন শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার শিক্ষা ছুটির মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি।
এর মধ্যে চীনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের মার্চে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কোম্পানি খুলে তিনি ব্যবসা শুরু করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শারমিন জাহান শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমরা নকল মাস্ক সরবরাহ করিনি। এসব প্রোডাক্ট চীন থেকে ইম্পোর্টেড। এগুলোতো আমরা তৈরি করিনি। আমরা শুধু সাপ্লাই দিচ্ছি।
“প্রডাক্ট খারাপ হলে বিএসএমএমইউ প্রথমবারই আমাদের বলতে পারত। আমরা সেটা যাচাই করে দেখতে পারতাম।”