জেকেজিকাণ্ডে গ্রেপ্তার ডা. সাবরিনাকে রিমান্ডে চায় পুলিশ

জেকেজি হেলথকেয়ার কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক সাবরিনা শারমিন হুসাইন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2020, 05:33 AM
Updated : 13 July 2020, 05:49 AM

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ওই মামলায় তাকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।”

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করে আসা ডা. সাবরিনা জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী। সে কারণে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নামেই তিনি পরিচিত।

রোববার দুপুরে সাবরিনাকে হাসপাতাল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তেজগাঁও থানার এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে এক ভুক্তভোগীর করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন সাবরিনার স্বামী আরিফুলও।

জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার, সংক্ষেপে জেকেজির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিত।

এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুলকেও গ্রেপ্তার করা হয়। জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল, তাও ২৪ জুন বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

খিলগাঁও গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে বসানো বুথে করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় সরকার নির্ধারিত ল্যাবরেটরিতে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর নমুনা পরীক্ষার জন্য জেকেজি হেলথ কেয়ারকে দায়িত্ব দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তখন এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে ডা. সাবরিনার কথাই বলা হত।

কিন্তু জুনের শেষ দিকে জেকেজির দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাওয়ার পর তিনি দাবি করেন, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত দুই মাস ধরে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

রোববার তাকে গ্রেপ্তার করার পর তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, “সাবরিনা যে জেকেজি হেলথকেয়ার এবং এর মূল প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন সে ব্যাপারে কিছু তথ্য প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আরও কিছু জোগাড় করার চেষ্টা চলছে। রিমান্ডে নেওয়া হলে সব জানা যাবে।”

তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার রুবাইয়াত জামান জানান, জেকেজির বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতারণার মামলা এবং থানায় হামলা, ভাংচুর পুলিশের কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে।

প্রথম মামলাটি দায়ের করেন কামাল হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী। সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ, করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুযা প্রতিবেদন দেওয়া এবং জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রামণের মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয় সেখানে।

ওই মামলায় গত ২৩ জুন অরিফুলকে গ্রেপ্তার করার পর জেকেজি কর্মীরা তেজগাঁও থানায় গিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ বাদী আরকেটি মামলা করে এবং তাতে জেকেজির ১৮ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরিফের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে দুইজন ব্যবসায়ী একই থানায় আরও দুটো মামলা করেন। এর একটিতে ১২টি ল্যাপটপ ভাড়া নেওয়ার নামে আত্মসাৎ করা এবং অন্যটিতে দুটি আর্চওয়ে এবং ২০টি ওয়াকিটকি কিনে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

এর মধ্যে আরিফকে তিনটি প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে জানিয়ে রুবাইয়াত জামান বলেন, সাবরিনাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে প্রথম মামলায়। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রতারণার বাকি দুই মামলাতেও তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।