ইউনাইটেডে আগুন: ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি

ঢাকার গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে কোভিড-১৯ ইউনিটের পাঁচ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2020, 05:03 AM
Updated : 28 May 2020, 05:04 AM

উপ পরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন ফায়ার ব্রিগেড ট্রেনিং সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবুল চক্রবর্তী, উপ সহকারী পরিচালক নিয়াজ আহমেদ এবং বারিধারার জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ।

কমিটির অন্যতম সদস্য আজাদ বৃহস্পতিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটিতে আমাকে রাখার কথা আজই জানান হয়েছে। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।”

তদন্তের কাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো আলামত যেন না সরানো হয়, সে ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হবে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, রোগীর আত্মীয়-স্বজন, ওই ওয়ার্ডের ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয়, যিনি ফায়ার ব্রিগেডে প্রথম ফোন করেছিলেন- তাদের সবার বক্তব্য নেওয়া হবে।”

জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার আজাদ বলেন, শনিবার সকালে তারা সবার বক্তব্য শুনবেন। তারপর সবকিছু সমন্বয় করে প্রতিবেদন দেবেন।

ঢাকার গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে করোনাভাইরাসের রোগীদের ইউনিটে বুধবার রাতে আগুন লেগে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

গুলশানের ওই বেসরকারি হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে।

ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পাারলেও ততক্ষণে ভেতরের একটি কক্ষে পাঁচ রোগীর মৃত্যু ঘটে।

নিহতরা হলেন মো. মাহবুব (৫০), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভারনন এ্যান্থনী পল (৭৪), খোদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজ উল আলম (৪৫)।

তাদের মধ্যে তিনজনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উপ-কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আব্দুল আহাদ।

কীভাবে সেখানে আগুন লেগেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে তারা জানতে পেরেছেন।

দেশে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শুরুতে ইউনাইটেডে করোনাভাইরাসের রোগীদের ভর্তি করা না হলেও মাসখানেক আগে ভর্তি শুরু হয়েছিল।

এজন্য হাসপাতালের নিচে প্রাঙ্গণের একাংশে তাঁবু খাটিয়ে করোনাভাইরাস ইউনিট স্থাপন করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বেসরকারি হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল।

হাসপাতালের নিচতলায় ওই ইউনিটে চারটি আইসোলেশন কক্ষ ছিল। সামনের কক্ষের রোগীরা বের হতে পারলেও ভেতরের একটি কক্ষ থেকে ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অফ কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডা. সেগুফা আনোয়ার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৈদুতিক ‘শর্ট সার্কিট’ থেকে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করছেন তারা।

রোগীদের উদ্ধার করতে না পারার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করে তিনি বলেন, “আগুন লাগার সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। তীব্র বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে আইসোলেশন ইউনিটে থাকা রোগীদের বাইরে বের করা যায়নি।”

পুলিশ উপ-কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেখানে এসি ছিল এবং এসির স্পার্ক থেকে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এখানে যেসব উপাদান ছিল, সবই দাহ্য পদার্থ। এখানে স্যানিটাইজার ছিল, সেগুলোও দাহ্য পদার্থ। সে কারণে খুব অল্প সময়ে আগুন একটা বড় রূপ নেয় এবং পাঁচজন রোগী মৃত্যুবরণ করেন।”

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটি ঠিক করবে, এখানে কোনো গাফিলতি ছিল কি না, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কি না? তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এখানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”