ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে ৫ রোগীর মৃত্যু

ঢাকার গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে কোভিড-১৯ ইউনিটের পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2020, 04:52 PM
Updated : 27 May 2020, 08:01 PM

বুধবার রাতে বেসরকারি হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগে।

আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও তার মধ্যেই পাঁচ রোগীর মৃত্যু ঘটে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

কী কারণে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে তারা জানতে পেরেছেন।

নিহতরা হলেন মো. মাহবুব (৫০), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভারনন এ্যান্থনী পল (৭৪), খোদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজ উল আলম (৪৫)।

গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ শাহানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মাহবুব ১৫ মে, মনির হোসেন ১৬ মে, অ্যান্থনি পল ও খোদেজা বেগম ২৫ মে এবং রিয়াজুল আলম ২৭ মে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলেন।

এদের মধ্যে তিনজনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উপ-কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আব্দুল আহাদ।

দেশে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শুরুতে ইউনাইটেডে করোনাভাইরাসের রোগীদের ভর্তি করা না হলেও মাসখানেক আগে ভর্তি শুরু হয়েছিল।

এজন্য হাসপাতালের নিচে প্রাঙ্গণের একাংশে তাঁবু খাটিয়ে করোনাভাইরাস ইউনিট স্থাপন করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

সেখানেই রাত ১০টার দিকে আগুন লাগে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা কামাল হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইউনাইটেড হাসপাতালের নিচতলায় রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে আগুন লেগেছিল। আমাদের ৩টি ইউনিট তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে।”

গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় জানতে ভারনন অ্যান্থনি পলের মেয়ের স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি।

“তিনি হাসপাতালের ফটকে ছিলেন এবং যখন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেখতে পান, তখন ৯টা ৪৮ মিনিটে ৯৯৯ ফোন দেন তিনি।”

সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নানা ভিডিওতে দেখা যায়, বেসরকারি হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল।

গুলশান থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাসপাতালের বাইরের দিকে করোনা রোগীদের জন্য যে তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেখানে আগুন লাগে।”

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকার গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড-১৯ রোগীদের আইসোলেশন ইউনিট।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত আরেক কর্মকর্তা কামরুল হাসান রাত ১১টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “(হাসপাতালটির) নিচতলায় চারটি আইসোলেশন কক্ষ ছিল। সামনের কক্ষের রোগীরা বের হতে পারলেও ভেতরে একটি কক্ষে ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।”

নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারেননি।

পুলিশ উপ-কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফায়ার সার্ভিস সঠিক কারণ এখনও জানাতে পারেনি।

“তবে প্রাথমিকভাবে বলেছে, এখানে এসি ছিল এবং এসির স্পার্কিং থেকে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এখানে যেসব উপাদান ছিল, সবই দাহ্য পদার্থ। এখানে স্যানিটাইজার ছিল, স্যানিটাইজারগুলো দাহ্য পদার্থ। সে কারণে খুব অল্প সময়ে আগুন একটা বড় রূপ নেয় এবং পাঁচজন রোগী মৃত্যুবরণ করেন।”

ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অফ কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডা. সেগুফা আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।”

রোগীদের উদ্ধার করতে না পারার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “আগুন লাগার সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। তীব্র বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে আইসোলেশন ইউনিটে থাকা রোগীদের বাইরে বের করা যায়নি।”

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত হবে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা সুদীপ বলেন, “একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটি ঠিক করবে, এখানে কোনো গাফিলতি ছিল কি না, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কি না? তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এখানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মৃতদের সৎকারের বিষয়ে উপকমিশনার সুদীপ বলেন, “যাদের নেগেটিভ তাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শে স্বজনদের কাছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব এবং বাকি তিনজনের ক্ষেত্রে আইইডিসিআরের প্রটোকল মেনে ব্যবস্থা করা হবে।”

ইউনাইটেডের কোভিড-১৯ ইউনিটে আর কোনো রোগী এখন নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা আহাদ।

ডা, সেগুফা আনোয়ার বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে রোগীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

কোভিড-১৯ সন্দেহজনক রোগীদের হাসপাতালের ‘নেগেটিভ প্রেসার রুমে’ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হবে না।