পার্কে হাঁটাহাঁটিতেও রাশ

নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্ক মানুষের স্বাভাবিক জীবনের রঙও শুষে নিয়েছে।

সুমন মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2020, 10:18 AM
Updated : 22 March 2020, 10:49 AM

কিছুদিন আগেও সকাল-বিকাল দলবেঁধে হাঁটা, ব্যায়াম, আড্ডায় রাজধানীর পার্কগুলো মুখরিত থাকলেও ভাইরাস আতঙ্কে বেশিরভাগ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষই নিজেদের খোলসবন্দি করে ফেলেছেন।

রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ পার্ক- কোথাও এখন তেমনটা দেখা মেলেনা এসব মানুষের।

রোববার রমনা পার্কের গেইটে ঝুলতে দেখা গেল করোনাভাইরাস বিষয়ক সতর্কবার্তা।

সুনসান রমনা পার্ক

আগে রমনা পার্ক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পার্ক কর্তৃপক্ষ সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং বিকাল ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত প্রবেশের সময় বেঁধে দিয়েছে।

সকাল ১১টায় হাঁটতে এসে পার্কের গেইটে এমন নোটিস দেখে মনক্ষুন্ন হন কয়েকজন। বাধ্য হয়ে তারা পার্কের বাইরের ফুটপাতেই হাঁটার কাজটি সেরে নেন।

সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা মমতা আহমেদ বলেন, “ভোর বেলা হাঁটতে পারি না। সেজন্য ১০/১১টা দিকে নিয়মিত রমনা পার্কে আসি। এই নোটিসের কারণে এখন পার্কের বাইরে ফুটপাতে ওয়াকিং করছি। কিছু করার নেই। কারণ হাঁটা আমরা রেগুলার প্র্যাকটিস।”

তবে পার্কে কর্তৃপক্ষের এই সর্তকতামূলক ব্যবস্থার প্রশংসা করেন বেইলি রোডের সরকারি কোয়ার্টারের বাসিন্দা নাসরিন সুলতানা।

“করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্তকতামূলক এই ব্যবস্থা আমি মনে করি জরুরি ছিল। কারণ এই পার্কে সকাল থেকে নানা শ্রেণির মানুষজন আসেন।

“অনেকে ব্যায়াম করতে আসেন। আবার অনেকে আসেন সময় কাটাতে। কেউ আসেন সবুজ আঙিনায় বিশ্রাম নিতে, ভবঘুরের মানুষজনও কম আসেন না। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এলাকাটি ভিষণ রিস্কি জোন বলে আমি মনে করি।”

নির্ধারিত সময়ের পরে এসে রমনা পার্ক বন্ধ দেখে অনেকেই বাইরের ফুটপাতেই হাঁটেন

“পার্ক কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী,” বলেন এই কলেজ শিক্ষক।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে হাঁটার অভ্যাস থাকলেও এখন তিনি করোনাভাইরাসের কারণে যাচ্ছেন না।

রমনা পার্কের ঝাড়ুদার শেফালী জানান, করোনাভাইরাসের ভয়ে পার্কে আগের মতো মানুষজন আসে না।

“অনেক কইমা গেছে। মানুষজন কইমা গেলেও গাছ-গাছড়ার পাতা-টাতা পরা ভইরা গেছে। খালি পার্কে ঝাড়ু দিয়া সময় কাটাই।”

গুলশানে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন পার্কেও একই অবস্থাও।

অভিজাত এলাকার এই পার্কের কর্মী ফজলু জানান, এক সপ্তাহ ধরে পার্কে মানুষজনের আনাগোনা কমে গেছে।

“যেসব স্যাররা নিয়মিত আসতেন, তারা এখন কিছুটা গ্যাপ দিয়ে আসেন।”

এই পার্কে বিদেশি কূটনীতিক, সরকারি-সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিত্তবান মানুষরাই সকাল-সন্ধ্যায় শরীরচর্চা করতে আসেন। এই পার্কে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ ভালো।

জনশূন্য গুলশানের প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন আহমদ পার্ক

প্রতিদিন এই পার্কে সকালে হাঁটেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা তোজাম্মেল হোসেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ওয়াকিং করতে আসি শরীরটা ঠিক রাখার জন্য। এটা আমরা ডেইলি রুটিন। কারণ আমি ডায়াবেটিসের রোগী।

“এই পার্কে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে না, কিছুটা ব্যারিয়ার আছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষজনের মুভমেন্ট এমনিতেই সীমিত হয়ে গেছে। এর প্রভাব পার্কেও পড়েছে, এটাই স্বাভাবিক।”

গুলশান ৮৯ নম্বর সড়কে একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এলাকার ‘সাহেব’রা ঘরেই থাকেন। খুব একটা প্রয়োজন না হলে তারা বের হন না।

“শুধু তাই নয়, গুলশানের অনেক বাসায় বিদেশি নানা জাতের কুকুর পোষা হয়। আগে নিয়মিত সকাল বেলা লেকের পাড় দিয়ে রাস্তায় ওইসব কুকুরকে হাঁটানো হতো, যা এখন সেভাবে দেখা যায় না,” বলেন তিনি।